• নরসিংদী
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

রায়পুরায় শতবর্ষী খলিলাবাদ বিলে 'পলো বাওয়া' উৎসব অনুষ্ঠিত 


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৫৭ পিএম
রায়পুরায় শতবর্ষী খলিলাবাদ বিলে 'পলো বাওয়া' উৎসব অনুষ্ঠিত 
শতবর্ষী খলিলাবাদ বিলে 'পলো বাওয়া'

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রাম গঞ্জের বিল ঝিলে "পলো বাওয়া" গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্য। নরসিংদীর রায়পুরায় খলিলাবাদ বিলে মাছ শিকারীরা প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী এ পলো-বাওয়া উৎসব করেছে। উৎসবে কিশোর থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধও রয়েছেন। প্রতি বছরই ফাল্গুন-চৈত্র মাসের কোন একদিনে এই উৎসব করে। 

এ বছর (২ মার্চ) বৃহস্পতিবার দুপুরে খলিলাবাদ ঐতিহ্যবাহী বিলে গিয়ে দেখা যায় শীতের শেষে বসন্তের দুপুরে ঝলমলে রোদে ২ হাজারো অধিক শিকারী পানিতে নেমে পলো, মাছ রাখার থলে নিয়ে কচুরিপানা সড়িয়ে হই হুল্লোড়ে মাছ শিকার ও উৎসব পালন করতে দেখা গেছে।

মাছ শিকারী ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের খলিলাবাদ গ্রামে খলিলাবাদ বিলে শত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে পলো বাওয়া উৎসব। পলো উৎসবটি উপভোগ করতে গ্রামের পুরুষ, মহিলা, শিশু, কিশোর, কিশোরী ও শিশুরা সবাই বিলের পাড়ে উল্লাস করে।

এ উৎসবটিকে ঘীরে নরসিংদীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ২ হাজারো অধিক শিকারী প্রতি বছর এ উৎসবে অংশ নেয়।

গ্রামের বাসিন্দা ও বিলের পাশের কৃষি জমির মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ছোট বেলায় দেখতাম বসন্তের এ সময়টাতে আমার দাদারা এ বিল থেকে বড় বড় রুই, কাতল, মৃগেল, শোল, বোয়াল, পুঁটি সহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ এ বিল থেকে ধরতেন। এ বিলের মাছ অনেক সুস্বাদু। তাই তো এখনো পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ৫-৬টি জেলার প্রায় ১হাজরেরও বেশি মানুষ এ বিলে মাছ ধরতে আসে।

কেউ মাছ পায়, আবার কেউ পায় না তবে সকলেই আনন্দের সাথে হাসি মুখে এ উৎসবে অংশ নেয়। 
তিনি আরো বলেন, প্রথমবার তারা মাছ বেশি পেলে তারা পুণরায় আবার বিলে মাছ ধরতে নামে।
শিকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উৎসবের সপ্তাহ খানেক আগে পলো বাওয়া  উৎসবে অংশ নেওয়া কোন একজনের দায়িত্বে পার্শ্ববর্তী গ্রামে-গঞ্জে প্রতি বাজারে ১০০ টাকার বিনিময়ে  তৈলের টিন বাজিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় উৎসবের তারিখ।

এমন খবর জানার পর লোকজন পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে পুরোনো পলো গুলো ধুয়ে মুছে উৎসবে যাওয়ার জন্য তৈরি করে রাখে। আর যাদের পলে নষ্ট হয়ে গেছে তারা বাজার থেকে নতুন পলো ক্রয় করে উৎসবে অংশ নেয়।

উৎসবের দিন সকালে নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে বিলের পাড়ে গিয়ে সমবেত হন হাজারো শিকারী। ঘড়ির কাটায় নির্ধারিত সময় বেজে ওঠলেই সবাই মিলে এক সঙ্গে পলো নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবাই মেতেছে পলো বাওয়া উৎসবে। পলোতে ধরা পড়ে বোয়াল, শোল, মাগুর, গজারসহ বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় নানান রকমের মাছ।

গাজীপুর থেকে আসা আহাম্মেদ আলী নামে ষাটোর্ধ্ব এক মাছ শিকারি বলেন, আমি এসেছি গাজীপুর থেকে। ৭ বছর যাবত প্রতি বছর এখানে আসে মাছ শিকার করি। এবারও এসেছি।  মাছ পাওয়া না পাওয়া বিষয় না। সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ হুল্লোড় করছি। এখনো পর্যন্ত দুটো গজার মাছ পেয়েছি। আশাকরি আরও পাবো।

সোলায়মান নামে ময়মনসিংহের একজন বলেন, আমরা ৫জন এসেছি। আমি এখনো পর্যন্ত একটা শোল মাছ পেয়েছি। আনন্দ লাগছে। বেচেঁ থাকলে আগামীতেও আসবো।

রাজবাড়ি জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার আনিস মিয়া বলেন, আমরা ২জন এসেছি এখানে মাছ শিকার করতে। ৫-৬ বছর যাবৎ আমি এখানে প্রতিনিয়তই আসছি। সামনেও আসবো।

গাজিপুরের কালীগঞ্জ থেকে মোবারক নামে আরেক মাছ শিকারি বলেন, আমি একটি বড় বোয়ালসহ ছোট মাছ পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। টাকা দিলেও এই মাছ আমি কিনতে পারবো না। এটা শখের জিনিস। আমি বাড়ি নিয়ে পরিবারকে নিয়ে মজা করে খাবো।

বেলাবো থেকে ওয়াজিদ নামে এক মৎস্য শিকারী বলেন, আমরা ২০-২৫ জন এসেছি। আমরা এখানে প্রতিবছরই আসি। এবার এসে বিভিন্ন জাতের মাছ পেয়েছি। খুবই ভালো লাগছে।

পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া জানান, এই বিল সবার জন্য উন্মুক্ত।প্রতি বছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো-বাওয়া উৎসব হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর তা পালন করছে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৎস্য শিকারীরা

জাগো নরসিংদী/শহজু

উৎসব / দিবস বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ