• নরসিংদী
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে আদম ব‍্যাপারীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক বিদেশগামী


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৪০ পিএম
নরসিংদীতে আদম ব‍্যাপারীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক বিদেশগামী

ফেরদৌস হাসান: পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য শেষ সম্বল টুকুও হারাতে হচ্ছে বিদেশ নামক সোনার হরিণ ধরতে। কারও কারও ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই। নরসিংদীতে লাইসেন্স বিহীন কথিত আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন বিদেশগামীরা। সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন কেউ কেউ। নিঃস্ব হয়ে পরিবারের সদস্যরা ভাসছে অথৈ সাগরে।

সম্প্রতি সরেজমিনে এ সকল পরিবারের দু:খ দুর্দশার কথা জানতে এবং তাদের সাথে কথা বলতে 'এই প্রতিবেদক নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জেলার বেশ কয়েকজন কমিশন ভিত্তিক আদম ব‍্যাপারী বা দালালের সন্ধান পায়। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

এসব আদম ব‍্যাপারীদের মধ‍্যে কামাল হোসেন অন‍্যতম। প্রথমে নামিদামি কোম্পানী, আকর্ষণীয় বেতন ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল কর্মহীন যুবকদের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের মূল টার্গেট। টার্গেটকৃত ব্যাক্তিরা তাদের ফাঁদে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ পাড়ি জমায়। আর সেখানেই পৌঁছানোর পর থেকেই দালালদের আসল রুপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

তারা সেখানে নিয়ে এসকল যুবকদের অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে সেই দালালদের চাহিদা অনুযায়ী যারা টাকা দিতে পারে কেবল মাত্র তারাই চাকুরী পায়। আর যারা টাকা দিতে না পারে তারা অর্ধাহারে অনাহারে অসহনীয় মানবেতর জীবন-যাপন করে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। 

আবার কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে প্রবাসে কারাজীবন বরণ করে নিচ্ছে। দেশে এসে আদম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ফেরত চেয়ে উল্টো তাদের হামলা-মামলার স্বীকার হতে হচ্ছে। অর্থ উপার্জনের আশায় পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরছেন অনেকেই।

আদম ব‍্যাপারী কামাল হোসেনের গ্রামের বাড়ী নরসিংদী সদর উপজেলার  চরাঞ্চল নজরপুর ইউনিয়নে হলে সে বিয়ে করার সুবাদে  নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মনপাড়া  এলাকা হারুণ ড্রাইভার মেয়ের জামাই তাকে সবাই চিনে এবং জানে।

বিদেশে গিয়ে পরিবারের অসচ্ছলতা গোছাবে এই আশায় বুক বেঁধে পাড়ি দেয় ভিনদেশে নরসিংদীর বেশ কয়েকজন যুবক।  এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আদম ব্যবসায়ী কামাল হোসেন অসহায় ওই সকল যুকদের  উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে সৌদি আরব পাঠান হোটেল ভিসাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ভিসা বলে। সেখানে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে। উল্টো তাদের খাওন-খরচের জন‍্য দেশ থেকে পাঠাতে বাধ‍্য হয় পরিবারের লোকজন।

ভুক্তভোগী  নজরপুর ইউনিয়নের নবীপুর কান্দাপাড়া গ্রামের নাসিমা বেগম বলেন, তার ছেলেকে সৌদি আরবে ভালো কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন কামাল হোসেন। সাত মাস আগে ভিসা পেয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার পর তাকে একটি হোটেলে রেখে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তার কাছ থেকে পাসপোর্টসহ কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় সেখানে থাকা কামাল হোসেনের সহযোগীরা। পরে দেশ থেকে তার খাওনখরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়।

আদম দালালের খপ্পরে পড়ে কপাল পুড়েছে জেলার অনেক সাধারণ মানুষের। তাদের মধ‍্যে লোকমান হোসেন নামের এক হতভাগ‍্য বাবা। যিনি জহিরুল ও মাজহারুল নামে দুই ছেলেকে আদম ব‍্যাপারী কামালের মধ‍্যমে বিদেশ পাঠিয়ে এনজিও'র কিস্তির বর্তমানে তার গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃদ্ধ লোকমান হোসেনের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার কান্দা গ্রামে। 

বিদেশে গিয়ে কোন কাজ না পেয়ে শুধুমাত্র পরিবারের কথা ভেবে নিরবে নির্যাতন সহ্য করে টিকে আছে অনেকেই। 

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস‍্যরা জানায়, তাদের সন্তানরা বিদেশে যাওয়ার কথা অনুযায়ী কাজ না দিয়ে বসিয়ে রাখা হলে বার বার দালালে বাড়ী চক্কর কাটতে কাটতে অবশেষে দেন দরবার করে স্ট‍্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে যত সামান‍্য ৭০/৮০ টাকা ফেরত দিচ্ছে আদম ব‍্যাপারী কামাল হোসেন।

এব‍্যাপারে কামাল হোসেনের সাথে আলাপ করলে প্রতারনার বিষয়টি অস্বীকার  করেন।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়াটা দালাল নির্ভর। তবে তাদের দৌরাত্ম্য যে কতটা প্রকট এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা ভিসা কেনাবেচা আর ধাপে ধাপে দালালদের কারণে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে বিদেশগামীদের। বিষয়গুলো দেখভাল করার কথা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু উল্টো সেখানেও চলে ঘুষ-বাণিজ্য।

 ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে যাওয়া বিদেশগামী পুরুষদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। আর ভিসা বা চাহিদাপত্র কিনতে শুধু ২০২১ সালে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। মেহেরপুরে ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছে ৭ হাজার ৮শ ৯জন।

কেউ কেউ সুখে থাকলেও অনেকেই হারিয়েছেন শেষ সম্বল টুকু। ভুক্তভোগীরা দেশে ফিরে ন্যায় বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে হতাশায় ভুগছে অনেকেই।

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ