• নরসিংদী
  • মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২৪ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ;   ২৪ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে ইউপি সদস্য হত্যার দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি কোন আসামি


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৫৫ পিএম
নরসিংদীতে ইউপি সদস্য হত্যার দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি কোন আসামি

স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর আলোকবালী ইউপি সদস্য আমির  হোসেন সরকার  (৩২) হত্যার দুই মাস অতিবাহিত হলেওআজ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি  কোন  আসামী। গত ২২ এপ্রিল দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালি (উত্তরপাড়া) গ্রামে মৃত রজব আলীর ছেলে জব্বার মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

এ ঘটনায় নিহত আমির হোসেন সরকারের বড় বোন মোসা. মালেকা বেগম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫/৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামরাএলাকায় অবস্থান করলেও গত দুই মাসে রহস্যজনক  ভাবে কোন একজন আসামি  গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

নিহত আমির হোসেন সরকার নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য  ছিলেন। তিনি ওই ইউনিয়নের আলোকবালি (উত্তরপাড়া) গ্রামের  বাসিন্দা আব্দুল হক মিয়ার ছেলে। তিনি বিগত ইউপি নির্বাচনে ৩ নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা হলেন, মৃত- রজব আলীর ছেলে জব্বার মিয়া (৫০), তার ছেলে আমিরুল ইসলাম (২৬), মৃত রেজেক মিয়ার ছেলে রাজা মিয়া (৫২) ও জালাল মিয়া (৫০), জালাল মিয়ার ছেলে তারা মিয়া (২৮),  ইমরান হোসেন (২৬) ও জিহাদ (২২),  সামসুল মিয়ার ছেলে আলী হোসেন (২৫),  দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু (৩৬), রাজা মিয়ার ছেলে শাহাদত হোসেন (৩২),  বাচ্চু মিয়ার ছেলে শুকুর আলী (৩৪) এবং হাচুন মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (২৭)। এজাহারভুক্ত আসামীরা সকলেই আলোকবালী (উত্তরপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা।এছাড়া মামলায় ৫/৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়।

জানা যায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে আমির হোসেন সরকার ফুটবল প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে ঠেলাগাড়ী প্রতিকে  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন একই গ্রামের মৃতরজব আলীর ছেলে জব্বার মিয়া। নির্বাচনে ফুটবল প্রতিকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আমির হোসেন সরকার নির্বাচিত হন। এদিকে নির্বাচনে হেরে গিযে পরাজয় মেনে নিতে পারেনি জব্বার মিয়া।  তাই  বিজয়ী প্রার্থী আমির হোসেন মেম্বারের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ায় সে। এরপর বেশ কয়েকবার আমির হোসেনকে প্রানে মারার চেষ্টা চালায় ওই জব্বার মিয়া।

মামলার এজাহারে জানা যায়, আমির হোসেন নরসিংদীতে ব্যবসা করতো বিধায় পরিবার নিয়ে তিনি জেলা শহরে বসবাস করতেন।আমির হোসেন মেম্বারের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসলে গত ২২ এপ্রিল গ্রামের বাড়ী আলোকবালিতে আসেন আমির হোসেন । তারা দুই ভাই বসত ঘরের ভিতর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলছিল। এসময় দুপুর একটার দিকে এজাহারভুক্ত আসামী শুকুর আলী তাদের বাড়ীতে এসে কথা আছে বলে আমির হোসেন সরকারকে ঘর থেকে ডেকে বাড়ীর উঠানে আনতেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জব্বার মিয়ার নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের সন্ত্রাসী দল  রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, এসএস পাইপ ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রসন্ত্র নিয়ে আমির হোসেন সরকারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে তার মাথায় কোপ দিলে তা মাথার পিছনে বাম পাশে লাগে। এতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় সে। এ অবস্থায় দৌড়ে পালাতে গিয়ে এক জমিতে পড়ে গেলে তাকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, রামদা ও পর পর ছুরিকাঘাত করতে থাকে।

এদিকে আমির হোসেনের ডাক-চিৎকারে তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম,  প্রতিবন্ধি বাবা আব্দুল হক, মা  জমিলা  খাতুন এবং চচাতো ভাই বেদন মিয়া এগিয়ে গেলে এসএস পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাদেরকেও আহত করা হয়।

এদিকে পর্যাযক্রমে কোপ ও ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে অজ্ঞান হয়ে ওই জমিতে পড়ে থাকলে তার মৃত্যূ হয়েছে ভেবে সন্ত্রাসীরা ফেলে রেখে চলে যায়। পরে পরিবারের লোকজন আমির হোসেনসহ অন্যান্য আহতদের উদ্ধার করে নৌকা যোগে করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর পঞ্চবটি এনে সেখান থেকে এম্বুলেন্স যোগে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত আমির হোসেনকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। অপর আহত রফিকুল, তার বাবা আব্দুল হক, মা জমিলা ও চাচাতো বেদন মিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আমির হোসেন সরকারের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের একদিন পর অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল দুপুরে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিকেলে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।

মামলার বাদী নিহত আমির হোসেন সরকারের বড় বোন মোসা. মালেকা বেগম বলেন, আমার ভাইকে হত্যার দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত একজন আসামীও গ্রেফতার হয়নি। কি দোষ ছিল আমার ভাইয়ের। তাকে বিনা দোষে হত্যা করা হয়েছে। আসামীরা বীরদর্পে এলাকায় ঘুরাঘুরি করলেও তাদেরকে গ্রেফতার না করার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছি। তাহলে কি আমরা ভাই হত্যার বিচার পাব না।  এ অবস্থায় আমরা এখন নিজেদের অসহায় মনে করছি।

আমি এব্যাপারে নরসিংদী পুলিশের প্রধানকর্তা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি এবং আসামীদেন গ্রেফতারে জোড় দাবী জানাচ্ছি।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ার বিষযটি নিশ্চিত করে বলেন, আলোকবালির সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। নৌকা যোগে আসামী ধরতে যাওয়ার আগেই দূর থেকে আমাদেরকে দেখে সরে পড়ে। তাই আমরা নিয়মিত অভিযান চালালেও আসামীদের ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া দুইজন আসামী জামিনে রয়েছে।

এব্যাপারে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুজন চন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে জেলা শহরের সাথে আলোকবালির যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল। এখানে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা নদী পথ। তাই ইচ্ছে থাকলেও যখন তখন অভিযান পরিচালনা করা যায় না। আসামীদের গ্রেফতারে আমাদের আন্তরিকতার কমতি নেই। আমার জানা মতে এ মামলার দুই জন আসামী হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেছে।
 

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ