• নরসিংদী
  • বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে শীতকালীন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক, কমেছে দাম


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:২১ পিএম
নরসিংদীতে শীতকালীন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক, কমেছে দাম
বাজারে সবজির পসরা। জাগো নরসিংদী

মো.শাহাদাৎ হোসেন রাজু: শীতকালীন সবজির এখন চলছে ভরা মৌসুম। নরসিংদী জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজির চাষ হওয়ায় জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবুজে সবুজে ভরে উঠছে ফসলের মাঠ।

বির্স্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি শিম গাছের ডগা, শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, লাউ,বেগুন, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজি। চলতি বছর সবজির ফলন ভালো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে বেড়েছে সরবরাহ। মিলছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মুলা, গাজর, টমেটোসহ নানা ধরনের সবজি।

চলতি শীতকালীন সবজির মৌসুম শুরু হওয়া আগে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপনকালীন সময়ে কয়েক দফা বৃষ্টি হলে বীজতলা কিছুটা নষ্ট হওয়ায় মৌসুমের শুরুতে বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কম থাকলেও বর্তমানে ব্যাপক সবজি সরবরাহ রয়েছে। নরসিংদীর বারৈচা, যোশর, শিবপুর, হাতিরদিয়া, তালতলী, বেলাব, পোড়াদিয়া, নারায়ণপুর ও রাধাগঞ্জ।

নরসিংদীর বিভিন্ন পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির ব‍্যাপক সরবরাহ রয়েছে। সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দামও কমে এসেছে।

প্রকারভেদে বিভিন্ন সবজি মণ প্রতি দুইশ থেকে তিনশ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। তবে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বর্তমানে ৪ ‘শ থেকে ৫ ‘শ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারগুলোতে। যা খুচরা বাজারে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরকে।

প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে নরসিংদীর বিভিন্ন পাইকারি সবজি বাজারগুলো। জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এ বাজারগুলোতে সবজি কিনতে আসেন। কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে ভোর থেকেই পাইকারি বাজারগুলো সবজি নিয়ে আসেন প্রান্তিক চাষিরা। ভ্যান থেকে নামিয়ে অথবা ভ্যানে রেখেই পাইকারদের সাথে নানা ধরনের সবজির দর কষাকষি করতে দেখা যায় অনেককে।

বর্তমানে বাজারগুলোতে সবজি সরবরাহ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দামও আগের তুলনায় কমেছে। জেলার বিভিন্ন পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত সবজিচাষী ভ্যান ও রিকশায় করে বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে এসেছেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বাজারগুলোতে বেগুন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২ ‘শ টাকা মণ ধরে যা কিছু দিন আগেও বিক্রি হয় ১৫ ‘শ থেকে ২ হাজার টাকা মণ। শিম ১২ ‘শ থেকে ১৬ ‘শ টাকা মণ, টমেটু ৮ ‘শ থেকে এক হাজার টাকায়, মোটামুটি মাঝারি সাইজের ফুলকপি প্রতি ‘শ ১ হাজার ৫’শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। বাধাকপি প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। মূলা প্রতি একশ আটি ( প্রতি আটিতে ৪টি) এক হাজার থেকে ১২ ‘শ টাকা, লাউ মাঝারি সাইজের পিছ প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বরবটি ১২’শ থেকে ১৪ ‘শ টাকা মণ।

বাজারগুলোতে প্রায় প্রায় সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কমলেও বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। কিছু দিন আগে ২’শ থেকে ৩’শ টাকা পাল্লা ( প্রতি ৫ কেজি) দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারগুলোতে।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে চলতি শীতকালীন সবজি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেড়েছে সবজির উৎপাদন। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৯ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ ভালো। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে তা অনেকটা কমতে থাকবে। কেননা শীত মৌসুম শেষের দিকে শীতকালীন সবজির উৎপাদনও কমে যায়। শীতের মৌসুম যত শেষের দিকে যাবে বাজারে তত সবজির সরবরাহ কমবে এবং দামও কিছুটা বাড়তে পারে।

বাজারে আসা কৃষকরা জানান, ভালো ফলন হলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বর্তমানে সবজি চাষ করে তাদের খরচ পোষাচ্ছে না।

রাধাগঞ্জ বাজারে আসা খৈনকূট গ্রামে কৃষক হোসেন আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে শীতের আগাম সবজির ফলন না হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন সব ধরনের সবজিই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সবজির উৎপাদন বাড়ায় দামও কমে এসেছে। দাম যদি আরো কমে যায় তবে লোকসান গুনতে হবে।

বারৈচা বাজারে আসা বাখরনগর এলাকার কৃষক জামাল মিয়া জানান, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। দু’শ ফুলকপি নিয়া বাজারে আসছিলাম। প্রতিটি ১৩ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বেশি দামে সার ও কীটনাশক কিনেছি। সেচ দিতেও খরচ হয়েছে অনেক টাকা। ফুলকপি উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে, সেদামেই এখন বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে আসলে সবাই একদাম কয়।’

হারিছ মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, তিনি ৪০ গন্ডা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৭০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পেরেছেন। আশা করেছিলেন এবছর বেগুল চাষ করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ করবেন। কিন্তু বর্তমানে বেগুনের বাজার পড়ে যাওয়া সব আসা বেস্তে গেছে।

নরসিংদীর ৯টি সবজির বাজার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এসব শাকসবজি। রাজধানী ঢাকার চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ সবজির সরবরাহ হয়ে থাকে নরসিংদী জেলা থেকে। তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পেরে খুশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পাইকাররা।

ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা পাইকার ফরিদ মিয়া বলেন, এ অঞ্চলের সবজির মান চাহিদা অন্যান্য এলাকার সবজির চাই অনেক ভাল বিদায় আমি এ বাজারে সবজি নিতে আসি। বর্তমান সবজির সরবরাহ বেশী থাকায় দাম কম রয়েছে। আর কয়েকদিন পর এ অবস্থা থাকবে না। শীতের শেষের দিকে সবজির সরবরাহ কমতে থাকে।

নরসিংদীর মাধবদী থেকে আসা হাসান খন্দকার নামে একজন পাইকার বলেন, ‘এখন অন্যান্য সময়ের তুলনায় সবজি দাম অনেক কম। গত দুই সপ্তাহ আগেও বাজার মোটামুটি চড়া ছিল। এখন বাজারে সবজির যোগান যেমন আছে দামও কম আছে। কম দামে কিনতে পারলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারব।

এদিকে শীতকালীন সবজি খুচরা বাজারগুলো প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজির সরবরাহ থাকা বাজারদর নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ। বর্তমানে বাজারে সবজির যোগান বেশি থাকায় দাম কমেছে।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রশিদ বলেন, 'সারাদেশে নরসিংদী অঞ্চলের সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখানে এসে সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।'

চলতি মৌসুমের শুরু প্রতিকূল আবহাওয়া মধ্যেও নরসিংদী জেলার চাষীরা সবজি চাষ করেছে আর ফলন ভালো পেয়েছে। এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারমূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছেন বলেও জানান তিনি। 

জাগো নরসিংদী/সমক

কৃষি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ