• নরসিংদী
  • শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ০১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ;   ০১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
website logo

যৌতুক নিয়েও নির্যাতন, করলেন দ্বিতীয় বিয়ে; ন্যায়বিচার প্রার্থনায় নির্যাতিতা স্ত্রী


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৪৫ পিএম
যৌতুক নিয়েও নির্যাতন, করলেন দ্বিতীয় বিয়ে; ন্যায়বিচার প্রার্থনায় নির্যাতিতা স্ত্রী

মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: 'সুখ পাইলাম না রে, সুখ পাইলাম না…' এমন বিলাপের সুরে চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন সাদিহা। তার সেই কান্না পাষাণ মনেও দাগ কাটলেও গলাতে পারেনি স্বামী মিজান ও শ্বশুর সাগর মিয়ার হৃদয়ের কঠোরতা।

সাহিদার কোলে দুই বছরের শিশু কন্যা মেহেরিন। নিরুপায় শিশুটি নির্বাক চোখে মায়ের কষ্ট দেখছে আর যােন শুধু প্রশ্ন ছুড়ে দেয়— কেন এমন হলো মা?

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের প্রবাসী কাশেম আলী ও মর্জিনা খাতুন দম্পতির মেয়ে সাহিদা। প্রায় চার বছর আগে একই উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সাগর মিয়ার ছেলে মিজানকে বিয়ে করেন তিনি।

বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয় নগদ দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও থাকার জন্য একটি ঘর। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মিজান শুরু করে নির্যাতন। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত এবং অস্বীকার করলেই মারধর করত। মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে একপর্যায়ে সাহিদার পরিবার মিজানকে বিদেশ পাঠায়। কিন্তু অল্পদিন পরেই সে দেশে ফিরে আসে।

বিদেশ যাবার আগে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে মাছ ধরাতে গিয়ে সে সময় মিজানের পরিচয় হয় সুমি নামের একটি মেয়ের সাথে। পরবর্তীতে সেই সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। এর জের ধরেই বিদেশে গিয়েও বেশী থাকতে পারেনি। দেশে ফিরে সুমিকে কাছে পেতে সাহিদার প্রতি আরও নির্মম হয়ে ওঠে মিজান।

মিজানের বাবা সাগর মিয়া ও সৎমা ফাতেমা বেগমও ছেলে মিজানকে উস্কানি দিত বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে মিজান গোপনে সুমিকে বিয়ে করে রায়পুরা উপজেলা সদরে ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করে।

গত ২৫ অক্টোবর সাহিদা তার মা মর্জিনা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীনগর এলাকায় খালার বাড়িতে যাওয়ার পথে মিজান ও তার সহযোগীরা বাঁশের লাঠি, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।  এসময় মিজান স্ত্রী সাহিদার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে সাহিদার মায়ের মাথায় লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে তার সহযোগী  সন্ত্রাসীরা। তারা সাহিদার গলা থেকে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায় এবং এ ব্যাপারে  মামলা করলে হত্যার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় সাহিদা নিজে বাদী হয়ে নরসিংদী আদালতে স্বামী মিজানসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়— আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে শ্লীলতাহানি, মারধর, মালামাল ছিনতাই ও হত্যার হুমকি দিয়েছে, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। 

স্থানীয়ভাবে সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় সাহিদা থানায় গিয়ে মামলা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হন।

সাহিদার স্বামীর বাড়ি শ্রীনগর গ্রামে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার বাবার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

শ্রীনগর গ্রামের বাসিন্দা বাসেদ মিয়া বলেন, বিয়ের সময় চাহিদার মা-বাবা দেড় লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছে। পরবর্তীতে তাদের পারিবারিক একটা দ্বন্দ্বে স্থানীয়ভাবে একটি দরবার হয়। ওই দরবারে আমরা যৌতুকের বিষয়টি জানতে পারি। পরে মিজান সাহিদার বাবার বাড়িতে গেলে আলমারি ভেঙ্গে  আড়াই লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায় বলে জানতে পারি। গত মাস ছয়েক আগে মিজান তার স্ত্রীসন্তান রেখেই দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ে পর  বাড়িতে থাকাকালীন দেখতাম প্রায়  সাহিদাকে মারধর করতো। এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তারাও গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রী ও দুই বছরের শিশুকন্যার ভরণ পোষণ তো দূরে থাক তাদের খোঁজ খবরও নেয় না বলে শুনেছি।

বর্তমানে আদালতে করা মামলার আরজিতে সাহিদা আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়ে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন।
 

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ