• নরসিংদী
  • সোমবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  সোমবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ;   ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
website logo

দীর্ঘ আঠার বছর পর বাড়ি ফিরলো জাহাঙ্গীর আলম


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৪৩ পিএম
দীর্ঘ আঠার বছর পর বাড়ি ফিরলো জাহাঙ্গীর আলম

হলধর দাস : দীর্ঘ ১৮-বছর, প্রায় দুই দশক পর জাহাঙ্গীর আলম ফিরে এসেছেন আপন নীড়ে, নিজ পরিবার পরিজনদের কাছে!

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসিয়াল ফেইসবুক আইডি থেকে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল জিতরামপুরের বাসিন্দা। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া জাহাঙ্গীর আলমের জীবন কেটে যাচ্ছিল বিস্তীর্ণ মেঘনার বুকে মাছ ধরে। তার ঘর আলোকিত করে একে একে জন্ম নেয় চার ছেলে। ৫ম সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে রেখে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে জাহাঙ্গীর আলম পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায়। দালালের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়া গিয়ে প্রথম দিকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখতে পেরেছিলেন। কিছুদিন পর থেকে পরিবারের সাথে তার আর কোন যোগাযোগ নেই। এভাবেই দেড় যুগ ধরে নিখোঁজ জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের লোকজন ভাবলেন তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। তার বাড়িতে ফিরার আশা ছেড়ে দেন পরিবার-পরিজন। 

গত ২১ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা জাহান সরকার, নরসিংদী সদরের অফিসিয়াল মোবাইলে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই-কমিশন থেকে একটি ফোন আসে। ফোন করেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সিলর (লেবার), সৈয়দ শরীফুল ইসলাম মহোদয়। 

ফোনে তিনি ইউএনও মহোদয়কে জানালেন ওখানে ক্যাম্পে একজন বাংলাদেশী আটক আছেন। ওনার কোন পাসপোর্ট, আইডি কার্ড কিংবা অন্য কোন ডকুমেন্টস সাথে নেই। সে খুব অসুস্থ, বাকশক্তিহীন তাই কোন তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। 
সম্প্রতি হাইকমিশনের ফেসবুক পেইজে ওনার ছবি দিয়ে নাম, পরিচয়, ঠিকানা জানার জন্য পোস্ট করা হয়েছিল। 

এরপর দেশের অনেক প্রান্ত থেকেই অনেকে নিজেদের স্বজন দাবি করে হাই-কমিশনে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাই অন্তে কেউই তাকে পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। 
তবে নরসিংদী সদর উপজেলার কেউ একজন ওই পোস্টের কমেন্টে দাবি করেন ওনার বাড়ি চরদিঘলদী ইউনিয়নে। উনার নাম, পরিচয়, ঠিকানা যাচাই করে উপযুক্ত প্রমাণকসহ হাইকমিশনে লিখিতভাবে জানানোর জন্য ইউএনও মহোদয়কে বলা হয়। 

ইউএনও মহোদয় তাৎক্ষণিক বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করার কাজ শুরু করেন। ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারকে খুঁজে পেতে তিনি সক্ষম হন।

পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যদের সাথে ইউএনও মহোদয় সরাসরি কথা বলে নিশ্চিত হতে পারেন যে,  উনারাই ১৮ বছর পূর্বে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের প্রকৃত স্বজন। 

পরিবারটির বর্তমান আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা জাহান সরকার । বিবেক, মনুষ্যত্ববোধ তাকে ভীষণভাবে ত্বারিত করছিলো। 

দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার সমস্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে হাই কমিশন বরাবর আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার । আবেদনে তিনি দাবী জানান, যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু পরিবারটির আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, আবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করে উনাকে সরকারি খরচে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। ইউএনও মহোদয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কমিশন অত্যন্ত মানবিক ও আন্তরিকভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করে জাহাঙ্গীর আলমকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। 

গত ৭ নভেম্বর, ২০২৫ জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।  পরিবারের সদস্যরা এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে উনাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে এক নজর দেখতে এবং তার খোঁজ খবর নিতে ইউএনও মহোদয় জিতরামপুরে যান।

সেখানে গিয়ে দেখেন এক ভিন্ন পরিবেশ। মালয়েশিয়া গিয়ে কিছুদিন পরই অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে তিনি দীর্ঘদিন জেল-হাজতে থাকতে থাকতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। বাংলাও এখন ঠিকমত বলতে পারেন না, কেবল ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকেন,অঝোরে কাঁদেন।এত দিনে বাবা-মাকেও হারিয়েছেন । এদিকে, তার প্রিয়তমা স্ত্রীও আশায় আশায় দিন গুণতে গুণতে অন্যের ঘরণী হয়েছেন । জাহাঙ্গীর আলমের জীবনে গত দেড়যুগে যা ঘটে গিয়েছে তা যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। 

সরকারি চাকরি করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন উল্লেখ করে আসমা জাহান সরকার বলেন, এই কাজটি করতে গিয়ে তিনি অনেক বেশি আবেগতাড়িত হয়েছেন। আমরা কেউই জাহাঙ্গীর আলমের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সোনালী সময়গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবুও জাহাঙ্গীর আলমকে প্রায় দুই দশক পর পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে আনতে সামান্য অবদান রাখতে পেরেছি- সেটি আমার ক্ষুদ্র জীবনের পরম পাওয়া। জাহঙ্গীর আলম ভীষণ অসুস্থ, বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। 

উপজেলা প্রশাসন, নরসিংদী সদরের পক্ষ থেকে জাহঙ্গীর আলমকে ইউএনও মহোদয়, তাৎক্ষণিক নগদ ২০ হাজার টাকা সহায়তা এবং কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় হতে উনার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 
বর্তমানে উনাকে চিকিৎসার জন্য নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আশা করেন যে, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় জাহাঙ্গীর আলম সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। 

নরসিংদী সদর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা কেউ জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতসারে জাহাঙ্গীর আলম ও উনার পরিবারের মত ভুল করবেন না, কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে বিদেশে যাবেন না। একটি ভুল যেন আর কারো সারা জীবনের কান্না না হয় এটাই কামনা করি।
 

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ