• নরসিংদী
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

জগন্নাথ থেকে জাতীয় সংসদে সপ্তমবার রায়পুরার রাজা রাজু


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:১৪ পিএম
জগন্নাথ থেকে জাতীয় সংসদে সপ্তমবার রায়পুরার রাজা রাজু

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু জগন্নাথ কলেজ থেকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ৭ম বারের মত জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ৬০'র দশকে পাকিস্তান সরকার আগ্রাসন চালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্পদ লুটে নেওয়ার দূর্বিসন্ধি করছিল। ঠিক সেই সময় দেশের কয়েকজন ছাত্র নেতা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের মধ্যে আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে ছয়দফাসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন নরসিংদীর রায়পুরার কৃতিসন্তান রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।

রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ৬০'র দশকে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে  রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হয়ে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই চলে আসেন ফ্রন্টলাইনে। তিনি ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।

রাজিউদ্দিন আহমদে রাজু ১৯৪৪ সালের ৯ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের আদিয়াবাদ দক্ষিণপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা  অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন ছিলেন পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ।

রাজিউদ্দিন আহমেদ তৎকালীন সময়ে জগন্নাথ  কলেজের ছাত্র ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের আধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিলো অন্যতম। ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেয়ার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই  রাজিউদ্দিন আহমদে রাজু জগন্নাথ কলেজের একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা হয়ে উঠেন। ছাত্র নেতা হিসেবে  দিন দিন রাজুর গ্রহণযোগ্য বাড়তে থাকে। ৬০ দশকে তিনি দুই দুুইবার জগন্নাথ কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে  প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সেই সংসদের মাত্র চার জন সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু অন্যতম।। ১৯৯১ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায় রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।

সেই নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আব্দুল আলী মৃধার কাছে  মাত্র ৯০৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আব্দুল আলী মৃধা পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৩৬০ ভোট। অপর দিকে এমপি রাজু পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৪৫৫ ভোট।

এরপর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৬ সালে নরসিংদী ৫ রায়পুরা আসনের  বিএনপি নেতা আব্দুল আলী মৃধাকে প্রায় ১৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। ১৯৯৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এ আসন থেকে টানা ছয় বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি নেতা আব্দুল আলী মৃধাকে পরাজিত করে বিজয়ী হন তিনি। পরে ২০০৮ সালে বিএনপি নেতা জামাল আহম্মেদ চৌধুরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন তিনি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে  রাজিউদ্দিন আহমদে রাজুকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে  ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন প্রবীণ এই নেতা। ২০১৮ সালে নরসিংদী-৫ আসন থেকে ফের বিএনপি নেতা আশারাফ উদ্দিন বকুলকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে পরজিত করে টানা ছয়বারসহ  সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে রাজিউদ্দিন আহমেদ নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ৭শত ৫৬ ভোট। তার নিকট তম প্রতিদ্বন্দ্বী একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৭৭ ভোট।

প্রবীণ এই নেতাকে মূল্যায়ন করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। জেলার বর্ষীয়ান এই জন নেতা ৭ম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় রায়পুরাবাসী আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন।

শ্রীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মুর্শেদ খান রাসেল বলেন, রায়পুরায় রাজু ভাইয়ের বিকল্প নেই, সেটা আবার প্রমান হয়েছে  রায়পুরাবাসী তাদের আস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে নৌকা প্রতীকে তাদের ভোট দিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে রাজু ভাইকে নির্বাচিত করেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, রাজু ভাই নির্বাচিত হওযায় আমরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছি। আমাদের মাঝে আজ ঈদের খুশি বিরাজ করছে।

রায়পুরা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামাল মোল্লা বলেন, শেখ হাসিনা রত্ন চেনেন। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোনো ভুল করেননি। তা আবারও প্রমান হলো। রাজু ভাইতেই রায়পুরাবাসীর আস্থা এটা বুঝতে পেরেই উনার নৌকা তুলে দিয়েছিলেন। আর নির্বাচনের ফলাফলে সেটাই প্রমান করেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসাইন বলেন, রাজু ভাই প্রবীণ নেতা, তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় আমরা সকলেই খুব খুশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার বিজয় প্রমান করেছে রায়পুরা আওয়ামী লীগের ঘাটি, রায়পুরা রাজু ভাইয়ের ঘাটি।

রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমানের হাত ধরে ৫৩ বছরের রাজনীতিতে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসা নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। ১৯৯৬ সালে দেড় কিলোমিটার পাকা রাস্তা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন পর্যন্ত রাস্তা ঘাটসহ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন ব্যাপক পরিবর্তন করতে সক্ষম হই। এ নির্বাচন ওই আমার শেষ নির্বাচন। আগামীতে মেঘনা নদীতে ব্রিজ নির্মাণ, চরে থানা স্থাপনসহ অসমাপ্ত কাজগুলো করতে চাই। । ৫৩ বছরের রাজনীতিতে চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই যা করেছি মানুষের জন্যই করেছি। রায়পুরার মানুষের এবং তৃনমুল নেতাকর্মীদের অন্তরে হৃদয়ে ভালবাসা টাই চরম পাওয়া। রায়পুরাবাসি আমাকে ভোট দিয়ে আবারও নির্বাচিত করায় আমি   রায়পুরার সাধারণ মানুষের প্রতি  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উল্লেখ্য, রায়পুরা উপজেলায় এমপি রাজুউদ্দীন আহমেদ রাজুর হাত ধরে বিগত সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ ও সংস্কারে এমপি রাজুউদ্দিন আহমেদ রাজু ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের জন্য মেঘনা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবল বসিয়ে সংযোগ লাইন টানা হয়েছে। বর্তমানে রায়পুরার চরাঞ্চল প্রতিটি গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ।

রাজনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ