
স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর রায়পুরায় পূর্ব শত্রুতার জেরে তাসফিরা আক্তার (১৪) নামের এক কওমী মাদ্রাসার ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
গত সোমবার (৯ জুন) সকাল ৯ টার দিকে উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে আদম আলীর বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তায় আসামী সোহেলের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। পরে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেল ৫ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাসফিয়া মারা যায়।
নিহত তাসফিরা আক্তার শ্রীনগর এলাকার আশ্রাব আলীর মেয়ে। সে স্থানীয় রওজাতুন কাওমী মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
এ ঘটনায় নিহতের তাসফিয়ার চাচাতো ভাই মো. কামাল হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার (১৩ জুন) ১২ জনের নাম উল্রেখসহ আরো ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের বাসিন্দা। তারা হলো- মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী সোহেল বাহিনীর প্রধান মো. সোহেল (৩১), মৃত মমতাজ মিয়ার ছেলে ওই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. আজিজ মিয়া (৫০), ধনু মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫), ইদ্রিস মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (২৫), শওকত আলীর ছেরে ফারুক মিয়া (২৮), আশরাফ আলীর ছেলে ইয়াছিন মিয়া (২২) ও জসিম উদ্দিন ওরফে বল্লা (২৫), আ. বারেকের ছেলে ফরিদ মিয়া (৫০), ওমর আলীর ছেলে জাকির হোসেন (৪৫), মঞ্জু মিয়ার ছেলে আছমত আলী ওরফে বটু (৫০) ও জুলমত আলী (৫৫) এবং আ. রাজ্জাকের ছেলে জোহুর আলী (৪০)। মামলার প্রধান আসামী সোহেলের নাম পূর্বে রায়পুরা ও শিবপুর থানায় জোড়া মাডারসহ ৩টি হত্যা মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা, ২টি মাদক মামলা, একটি বিষ্ফোরক মামলা একটি অপহরন মামলাসহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, গত সোমবার সকাল আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় তাসফিয়া। বাড়ি থেকে বের হয়ে আদম আলীর বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তায় পৌছলে পূর্ব শত্রুতার জেরে এজাহাভুক্ত আসামীরা অস্ত্র-সশস্ত্র নিয়ে বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে দূর থেকে গুলি ছুড়তে থাকে।
এসময় আসামী সোহেলের ছোড়া একটি গুলি তাসফিয়া কপালের ওপর এসে লাগলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত তাসফিয়াকে দ্রুত উদ্ধার করে স্বজনরা রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনদিন মৃত্যূর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়ে।
এদিকে তাসফিয়া আহত হবার পর বাড়ীর লোকজন চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে আসামীরা বাদী কামাল হোসেন ও তার আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। পাশাপাশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলাসহ হুমকি-দামকি দিতে থাকে। এ অবস্থায় বাদীসহ পরিবারের সদস্যরা অন্যায় না করেও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বর্তমানে নিহত তাসফিরার হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার।
এদিকে রাতে তাসফিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়ি শ্রীনগরে এসে পৌঁছায়। রাত ১১ টায় স্থানীয় শ্রীনগর মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা শেষে মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মামলার বাদী কামাল হোসেন বলেন, আসামিরা সন্ত্রাসী প্রকৃতির মানুষ বিদায় সব সময় তাদেরকে এড়িয়ে চলেছি আর এটাই আমাদের সাথে শত্রুতার কারণ ছিল। তারা আমার ছোট এই চাচাতো বোনকে গুলি করা হত্যা করেছে। তারাই আবার আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমরা কোন অন্যায় না করেও তাদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কিছুক্ষণ আগে আমার নিহত বোনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু জানের নিরাপত্তার অভাবে আমরা সেখানে উপস্থিত হতে পারিনি। এর চেয়ে কষ্টের বিষয় আর কি হতে পারে। তাই আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে তাসফিয়া হত্যায় যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আসামীরা গ্রেফতার হলে শ্রীনগর গ্রামের নিরিহ মানুষ শান্তি পাবে।
এব্যাপারে রায়পুরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) প্রবীর কুমার দাস মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত তাসফিরার চাচাত ভাই আজ শুক্রবার বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।