
মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নরসিংদীর পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি আসনেই প্রার্থীতা অপরিবর্তিত রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বাকী একটি নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে প্রার্থিতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে নতুন মুখ শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফজলে রাব্বাী খানকে। তিনি সন্ত্রাসী হামলায় নিহত প্রয়াত সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান কিরনের ছেলে এবং সদ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিবিদ প্রয়াত হারুনুর রশিদ খানের ভাতিজা।
এর ফলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন ২০০৮ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করা বর্তমান সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন। ২০১৪ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করা সাবেক এমপি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগে সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এ ছাড়া নরসিংদী সদরে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) নজরুল ইসলাম (বীর প্রতীক), নরসিংদী-২ পলাশে বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী-৪ মনোহরদী-বেলাব আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, নরসিংদী-৫ আসনে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু অপরিবর্তিত রয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। জেলার ৫টি নির্বাচনী আসনে মধ্যে ৪টিতেই প্রার্থী অপরিবর্তিত রেখে শুধু মাত্র একটি আসনে নতুন প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ। জেলার ৫টি আসনে নৌকার পেলেন যারা। তারা হলেন,নরসিংদী-১ (সদর) আসনে বর্তমান এমপি লে. কর্ণেল (অবঃ) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতিক, নরসিংদী-২ (পলাশ উপজেলা এবং সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন) আসনে বর্তমান সাংসদ ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী-৪ (মনোহরদী- বেলাব) আসনে বর্তমান সাংসদ ও শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। এই চারজনকে তাদের স্ব স্ব আসনে বহাল রাখা হয়েছেন।
শুধুমাত্র নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে নতুন মুখ হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফজলে রাব্বি খান। তিনি সাবেক এমপি রবিউল আওয়াল খান কিরণ এর ছেলে ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ খান এর ভাতিজা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নরসিংদী ছিল ঢাকা জেলার আওতাধীন একটি থানা শহর। তখন সংসদীয় আসন ছিল মাত্র একটি। এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট সহচর মোছলেহ উদ্দিন ভূইয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৭৫’র পর দেশের পট পরিবর্তনের হলে ক্ষমতায় আসেন সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান।
১৯৭৭ সাথে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে থানা শহর থেকে নরসিংদী মহকুমা শহরে রূপান্তরিত করা হয়। তখনও সংসদীয় আসন ছিল মাত্র একটি। জিয়াউর রহমানের হত্যার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুর ছাত্তারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেশের সরকার প্রধান হন আর এক সেনা কর্মকর্তা লে: জে: হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। ক্ষমাতায় এসে জাতীয় পাটি নামে তার একটি নিজস্ব দল গঠন করেন। তিনি দেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীয় করণের মাধ্যমে নরসিংদীকে জেলা হিসেবে রূপ দেয় এবং ৬টি উপজেলা গঠন করে ৫টি সংসদীয় আসন সৃষ্টি করে।
নরসিংদী-১ (সদর) দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করবে। এ আসনে চতুর্থবারের মত তাকে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরশাদের শাসন - আমলে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে নরসিংদী-১ (সদর) আসন থেকে মেজর (অবঃ) সামসুল হুদা বাচ্চু সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী হয়। পরে ১৯৮৬ জাতীয় পার্টি থেকে এড. মোস্তফা জামান বেবী মনোনয়ন পেয়ে সংসদ্য সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ১৯৯১ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী নরসিংদী এ যাবৎ সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক ধানের শীষ প্রতিকে এমপি নির্বাচিত হন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রার্থী সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন এবং তিনি আমৃত্যু সময়কাল এ আসনটি তার কব্জায় ধরে রাখেন। তার সময়ে নরসিংদীর এ আসনটিসহ পুরো নরসিংদী জেলা বিএনপির দুর্গ হিসাবে পরিচিতি ছিল।
১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামীগীগের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক সচিব মোহাম্মদ আলীকে পরাজিত করে পূণরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালে তিনি মারা যাওয়ায় উপ-নির্বাচনে ঢাকসুর সাবেক জি.এস. খায়রুল কবীর খোকন বিএনপির প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন।
জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জটিলতায় ওয়ান এলিভেনের পর ২০০৮ সালে সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব:) মো. নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতীক) রাজনীতিতে এসেই জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি এড. আসাদোজ্জামানকে টেক্কা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন বাঘিয়ে নেন। সেই নির্বাচনে রাজনীতিবিদ না হয়েও একজন সেনা কর্মকর্তা নৌকার জোয়ারে বিজয়ী হন।
দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হওয়ার পর নরসিংদীর তৎকালীন জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যার ইস্যুতে নরিসংদী-৫ (রায়পুরা)’র এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে মন্ত্রী না করে এমপি হিরুকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদেও আসীন হন তিনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে জেলা অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল মতিন ভূঁইয়ার সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ায় দুজনকেই জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর অনেক চড়াই উৎড়াই পার হয়ে অবশেষে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চতুর্থবারের মত তাকে নৌকার মাঝির মাঝি নির্বাচিত করেন দলীয় হাইকমান্ড।
নরসিংদী-২ (পলাশ ও সদরের একাংশ) এ আসনে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। পলাশে রয়েছে তার ব্যাপক প্রভাব। তার প্রভাবের ফলে পুরো উপজেলায় আওয়ামী লীগকে তিনি ঢেলে সাজান। এসময়ের বিএনপির দূর্গ ভেঙ্গে তা আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিচিত করেছেন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানকে পরাজিত করে নৌকার প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এ আসনে বিজয়ী হন। এরপর থেকেই ক্ষমতাশীল আওয়ামী নেতৃত্বের প্রভাব খাটিয়ে একে একে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যসহ সবটি পদই হাতিয়ে নেয় । সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করে শক্ত অবস্থানে চলে আসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
নরসিংদী-২ সংসদীয় এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ এই আসনে বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে মনোনয়ন পেলেও আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাসদ (ইনু) নেতা জায়েদুল কবির। এদিকে ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপপের নেতৃত্বে পলাশ উপজেলায় আওয়ামী লীগ আরও বেশী শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্যও তাকেতৃতীয়বারের মত নৌকার মাঝি হিসেবে নির্বাচন করেন দলীয় ফোরাম।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) এ আসনে নৌকার প্রার্থীতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নতুন মুখ। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত হয় শিবপুরের সাবেক এমপি রবিউল আলম কিরন খাঁ হত্যাকান্ড। একই সালের ২৮ এপ্রিল তিনি একটি মোটর সাইকেল চালিয়ে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী থেকে বাড়ী ফেরার পথে শিবপুরের খড়কমারা পাহাড়িয়া নদীর ব্রিজের উপর দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তার ভাই সাবেক শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত হারুন অর রশিদ খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে মামলার বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম চার্জশীট থেকে বাদ পড়েন। দীর্ঘ শুনানী শেষে আদালত ২ জনের ফাঁসির আদেশ, ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন। এরায়ে বিরুদ্ধে আসামী আপীল করলে প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক হত্যার বিচার পেতে তাঁর পরিবারকে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়। ১৮ বছর আইনি লড়াইয়ের পর ওই মামলায় একজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
তবে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগেই দন্ড পাওয়া ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে ২৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে দূর্বৃত্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ খানকে। এর তিনমাস ৩১ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যূবরণ করেন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হারুন অর রশিদ খান। পরিবার দুজন সদস্যের রাজনৈতিক হত্যাকান্ড শিবপুরে নতুন মুখ ফজলে রাব্বি খানের মনোনয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
শিবপুর আসনে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এমপির দখলে ছিল। পরে তাকে সংস্কারবাদী বলে বেগম খালেদা জিয়া দল থেকে বহিষ্কার করলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাঁস প্রতীক নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের নিকট পরাজিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক এমপি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক ভূইয়া মোহন আ’লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা কাছে পরাজিত হন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিলেও পরে তা ছিনিয়ে আনেন জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন। ওই নির্বাচনে পূণরায় আ’লীগ বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। নির্বাচনে জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন নৌকা প্রতিকে জয়লাভ এবং নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নৌকার এজেন্ট হত্যা মামলার আসামী হন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
এরপর থেকে বর্তমান ও সাবেক দুই এমপি দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। আর তাদের দ্বন্ধের বলি হন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা হারুণ অর রশিদ খান। এর আগে তার ভাই শিবপুর আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত রবিউল আউয়াল খান কিরন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। সময়ের ব্যবধানে একই পরিবারের দুসহদরের হত্যার বিষয়টি প্রভাব ফেলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা। আর এরই ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন প্রয়াত এমপি রবিউল আউয়াল খান কিরন এর ছেলে নতুন মুখ ফজলে রাব্বি খান। তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) রাজনৈতিক জীবনে এড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা করার পর তিনি দলকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে তিনি আবারও ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রতিরক্ষা, প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কামিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে শিল্প মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিজ্ঞ এ রাজনীতিবিদকে। এড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সফলভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। তাইতো পুরস্কার হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে তার হাতে নৌকা তুলে দেন দলের হাইকমান্ড।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) এ আসনের দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু । তিনি ‘১৯৯৬ সাল নরসিংদী-৫ রায়পুরার এ আসনটি অদ্যাবদী নিজের দখলে রেখেছেন। তিনি এ আসনের টানা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রায়পুরা থেকে নৌকা প্রতিকে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এ পর্যন্ত সাতবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে তিনি হন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করেন নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যা মামলা প্রধান আসামী তারই ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামী করা হলে সেই ইস্যূতে পরবর্তীতে এমপি নির্বাচিত হলেও মন্ত্রীত্বের সাধ পায়নি এই প্রবীণ রাজনৈতিক। বয়সের ভারে নুহ্য হয়ে পড়া রাজিউদ্দিন রাজু নরসিংদী-৫ রায়পুরায় এখনও তার একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছেন। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের হাতে এবারও অষ্টমবারের মত নৌকা তুলে দেওয়া হয়েছে।