স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে জাতীয় পার্টির দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের ডাক দিয়েছে। এদুটি গ্রুপই পরপর দুই দিন দুটি ভিন্ন স্থানে সম্মেলনের ডাক দেয়।
এদিকে গ্রুপ দুটি একে অপরের সম্মেলন প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে জেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
জেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদীতে দীর্ঘদিন ধরে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের’র নেতৃত্বাধীন গ্রুপটিই সক্রিয় ছিলো এবং এখনো সক্রিয় আছে। জেলার প্রায় সকল নেতাকর্মীই এই গ্রুপের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ।
কিন্তু জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ওমর ফারুকের অদূরদর্শিতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে জেলার নেতৃবৃন্দ তিনটি গ্রুপে বিভিক্ত হয়ে পড়ে। কিছু নেতৃকর্মী রওশন এরশাদ’র নেতৃত্বাধীন গ্রুপটিকে সমর্থন দিয়ে ওই গ্রুপে গিয়ে যোগ দেয়।
বর্তমানে জিএম কাদের সমর্থিত গ্রুপটিকে সমর্থন দিচ্ছে জেলার দুটি নেতাকর্মীরা৷ শুধু ২/৩ শতাংশ নেতাকর্মী রওশন এরশাদের নাম করে করা বহিস্কৃত মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা ও গোলাম মসিহদের সাথে আছে।
রওশন এরশাদ অনুসারি গ্রুপটি ২ জুন শুক্রবার নরসিংদী প্রেস ক্লাবে তাদের সম্মেলন আহবান করেছেন। অন্যদিকে জিএম কাদেরের অনুসারী শফিকুল ইসলাম, ওমর ফারুক মিয়া ও হাবিবুর রহমান, নেওয়াজ আলী ভূইঁয়ার নেতৃত্বে থাকা দুটি গ্রুপই ৩ জুন জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে একাত্বতা পোষণ করেছেন।
এই দুই গ্রুপের মধ্যে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের ৮০ শতাংশই হাবিবুর রহমান ও নেওয়াজ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন সম্মেলনের পক্ষে সমর্থন করছেন। তবে রওশন এরশাদ অনুসারি হুট করে গত দুই/তিনদিন আগে সম্মেলম আহবান করায় অপর গ্রুপটির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। আর এর জন্য সবাই জেলা জাপার আহবায়ক শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ওমর ফারুকের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতারর অভাবকে দায়ী করেন ।
জিএম কাদেরের অনুসারিরা যে কোন মূল্যে এ সম্মেলনকে প্রতিহত করবে বলে দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানা যায়, জাতীয় পার্টির মত ঐতিহ্যবাহী একটি দল বিগত সময়ে নরসিংদী জেলায় বেশ শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত ছিল। কিন্তু বর্তমান জাতীয়পার্টির নেতৃত্বে থাকা আহবায়ক শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ওমর ফারুকের নেতৃত্বের অদক্ষতার কারণে সংগঠনটিতে বিভিন্ন অসন্তুষ্টি তৈরি হয়েছে। জেলায় বর্তমানে জাতীয় পাটি, জাতীয় যুবসংহতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ ছাড়া বাকি অঙ্গ সংগঠনগুলো কেবলমাত্র নামের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
দলীয় নেতাকর্মী সাংগঠনিক অদূরদর্শীতার কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ আহবায়ক শফিকুল ইসলামকে জেলর নেতৃত্বে দেখতে চায় না। পদ হারানোর ভয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু একপ্রকার প্রচার বিমুখ রেখে সম্মেলন করতে চেয়েছিলো জেলা জাপা'র বর্তমান কমিটি। কিন্তু একাধিক গ্রুপ থাকায় সেটা হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে।
জানা গেছে, সম্মেলন নরসিংদী শিল্পকলায় হলেও দলীয় চেয়ারম্যানের আগমন উপলক্ষে লোকে লোকারণ্য হবে নরসিংদীতে। জেলা জাপা'র পক্ষে থেকে সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করার বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলেও নরসিংদী জেলা ছাত্র সমাজের সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম বলেন, " জাতীয় পার্টির জেলা সম্মেলনে ছাত্র সমাজের নেতা কর্মীদের উপস্থিতির জন্য বড় উন্মুক্ত মাঠের প্রয়োজন।
জনবন্ধু জিএম কাদেরকে বরণ করে নিতে শুধু ছাত্র সমাজেরই হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির যে স্পেস তা খুবই ছোট। আমরা উন্মুক্ত মাঠে সম্মেলনের প্রস্তাব করে ছিলাম। জেলা জাপা তা আমলে নেয়নি। শুধু ছাত্র সমাজ নয় জেলা জাপা'র বিভিন্ন ইউনিট কমিটি যেভাবে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন জেলা জাপা তা পূরণে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবুও তারা দলের চেয়ারম্যান মহোদয় আসবে বলে আমরা সম্মেলন সফলে সব ধরনের প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছি। আমরা এই সম্মেলনে পরিবর্তন চাই।"
রওশান এরশাদের অনুসারি গ্রুপের নেতা নাজমুল সিকদার বলেন, আমরা শুক্রবার আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা জাপার একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করবো। দলীয় নেতাকর্মীরা এই সম্মেলন বাতিলের জন্য অনুরোধ করলে তা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। সেক্ষেত্রে আমাদের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে তা করতে হবে।
জিএম কাদের পন্থি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া বলেন, "জেলা জাপার বর্তমান আহবায়ক শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বের বিভিন্ন উপজেলায় কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে তার প্রতি অসন্তোষ দেখা দেয়। তাই দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আগামীতে জেলার নেতৃত্বের পরিবর্তন চেয়ে হাবীবুর রহমান ভূঁইয়া ও আমাকে প্রার্থী হিসেবে সম্মেলনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে অনুরোধ করে। আমরা তাদের প্রতি সম্মান রেখেই জিএম কাদের এমপি তথা জাতীয় পার্টির হাতকে শক্তিশালী করতে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। আমরা আশা করি আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যান তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আগ্রহকে বাঁচিয়ে রাখবেন। "
অপর দিকে স্বল্পসংখ্যক নেতাদের উস্কানী দিয়ে রওশন এরশাদের সমর্থনকারী গ্রুপটিতে যোগ দেয়ায় এবং আগামীকাল তাদের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দেয়। যা আদৌ সমীচিন নয় বলে বলছেন দলটির অনেক প্রবীণ নেতা।
নরসিংদী জেলা জাপার সদস্য সচিব ওমর ফারুক মিয়া বলেন, আগামী ৩ জুনের সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুমতিও নেয়া হয়েছে। হুট করে গত দুই-তিনদিন অন্য একটি গ্রুপ রওশন এরশাদের অনুসারি হয়ে আগামীকাল সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে আমি সম্মেলনটি বাতিলের জন্য অনুরোধ করেছি তারা আমাকে কথাও দিয়েছে তাদের সম্মেলন বাতিল করবে।
জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জাগোনরসিংদী/শহজু