• নরসিংদী
  • মঙ্গলবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ০৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  মঙ্গলবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ০৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নরসিংদীতে ঈদে বিক্রির জন্য ৭৬ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:০২ পিএম
নরসিংদীতে ঈদে বিক্রির জন্য ৭৬ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত
গবাদিপশু

মো.শাহাদাৎ হোসেন রাজু: কোরবানির ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। শেষ মুহূর্তে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসিংদীর কৃষক ও খামারিরা। ঈদকে সামনে রেখে নরসিংদীতে বিক্রির জন্য প্রায় ৭৬ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা। যা জেলার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। 

কোন প্রকার রাসায়নিক ঔষধ বা হরমোন জাতীয় ইনজেকশন প্রয়োগ না করে প্রতি বছরের মতো এবারও নরসিংদীতে খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন।

তবে গো খাদ্যের চড়া দামে পশু লালন পালন করে এ মহামারি করোনায় ন্যায্য মূল্য পাবেন কিনা তা নিয়ে অনেকটা শঙ্কায় আছেন খামারিরা। তার পরও খামারিদের আশা, করোনার এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে যদি দেশের বাইরের পশু আমদানি বন্ধ থাকে ঈদের হাটে এসব পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন তারা।

খামারি ও কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী এবার গো-খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে পশু লালন পালন খরচ অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।

জেলা পশুসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায় এবছর স্থানীয় খামারীরা তাদের খামারগুলোতে ৬৫ হাজার ৪৭২টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করেছে। আর ব্যক্তিগত ও কৃষক পর্যায়ে আরও ১০ থেকে ১২ হাজারের মত পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদার তুলনায়  প্রায় ১৯  হাজার বেশী।  নরসিংদী জেলা কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা প্রায় ৫৭ হাজার। সেই ক্ষেত্রে কোরবানির জন্য পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না বরং এ জেলার পশু অন‍্যত্র সরবরাহ করা সম্ভব হবে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

নরসিংদী জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৭ হাজার ১৬৬ জন খামারি ৬৫ হাজার ৪৭২টি পশু পরিচর্যা করে কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করেছেন। এ সকল পশুর মধ্যে রয়েছে গরু ৩৬০৯৬ যার মধ‍্যে ষাড় ২৫ হাজার ৮০৬টি, বলদ ৫ হাজার ২১৬টি, গাভী ৫ হাজার ৭৪টি। এছাড়া মহিষ ১ হাজার ৭৮০টি, ছাগল  ১৯ হাজার ৫৯১টি,  ভেড়া ৭ হাজার ৯০৯টি ও অন‍্যন‍্য পশু ৯৬টি। 

এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে কৃষকসহ সৃজনালী পশু পালনকারীরা কোরবানির জন্যে বিভিন্ন পশু লালন পালন করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার। তাই এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পশু হাটেও এ সব পশু সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করেছেন খামারিরা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস আগে বাজার থেকে গরু-মহিষ কিনে দেশীয় খাবার দিয়ে সৃজনারী লালন পালন করে বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন খামারিরা। অনেকে আবার ৮ থেকে ১০ মাস আগে থেকেই দেশের স্থানীয় হাট থেকে গরু-মহিষ ও ছাগল কিনে লালন পালন করছেন।

খামারিদের পাশাপাশি লাভের আশায় পারিবারিকভাবেও অনেক সৃজনারী কৃষক পশু মোটাতাজা করছেন। তবে এবার গো-খাদ্যের দাম একটু বাড়তি। তাই পশু পালনে খরচ বেড়েছে বলে জানান খামরিরা ও কৃষরা। এ সব খামারিরা গরুগুলো কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ও ভেজাল খাবার না খাইয়ে স্থানীয় জাতের ঘাস, খড়কুটো, ভুষি ও ছোলা খাইয়ে পশু মোটাতাজা করেছেন।

খামারিরা জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। অন্যান্য বছর ক্রেতারা কোরবানীর একমাস আগে থেকে খামারীদের সাথে যোগাযোগ করতেন পছন্দের পশুটি কিনার জন্য এবার করোনা ও সারাদেশে বন‍্যা পরিস্থিতির কারণে সে অবস্থান নেই।

ঈদের বেশি দিন বাকী না থাকলেও ক্রেতাদের মিলছেনা কোন সারা। বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা। ক্রেতা মিললেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা। এসব নানাবিধ ভাবনা গোড়পাক খাচ্ছে খামারিদের। সব মিলেই পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।

সৃজনাল খামারিরা বলছেন, তাদের পালিত পশুগুলোর বেশির ভাগই ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের। এ পশুগুলোর অধিকাংশই মধ্যবিত্তদের কাছেই চাহিদা পেতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কারণে মধ্যবিত্তরাই রয়েছেন নানান সঙ্কটে। অনেকেই হয়ত এবার কোরবানি নাও দিতে পারেন। ফলে পশুর চাহিদা এবার কম থাকবে বলে মনে করছেন তারা।

রায়পুরা উপজেলা চরমধুয়া এলাকার গ্রীণ এগ্রো ফার্মের মালিক আহসান শিকদার বলেন, এবার আমাদের খামারে দেশিয় জাতের ৯৫টি গরু পালন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে দেশে করোনা সংক্রামণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে কোরবানির পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে শষ্কায় আছি।

একই উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের কৃষক খুশি মিয়া বলেন, কোরবানি ঈদের হাটে বিক্রির জন্যে ৫ মাস আগে দুটি ষাড় কিনে লালন পালন করছেন। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু দুটি পালনে খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। ন্যায্য দাম না পেলে লাভবান হওয়া যাবে না।

শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা গ্রামের খামারি কিবরিয়া বলেন, প্রতি বছরই এই ঈদকে সামনে রেখেই আমরা খামরিরা সাধারনত পশু লালন পালনে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করে থাকি। আমার খামারে এবছর ৬৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি গরুকে কাঁচা ঘাস, খড়, তিলের খৈল, ছোলার খৈল, মসুরী ডালের খৈল, মটরসহ বিভিন্ন ধরণের সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। এবার দেশের বাইরের গরু আমদানি যদি বন্ধ থাকে তবে ন্যায্য মূল্যে এসব গরু বিক্রি করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।

নরসিংদী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান খান বলেন, এবছর নরসিংদী জেলায় প্রায় ৫৭ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। জেলায় ৭ হাজার ১৬৬ টি খামারে গরু ও মহিষসহ প্রায় ৬৫ হাজার ৪৭২টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত হয়েছে। এতে ১৯২ কোটি টাকা ব্যবসার আশা তাদের। এছাড়াও কৃষকসহ ব্যক্তিগত ভাবে গৃহপালিত ১০ থেকে ১২ হাজার পশু রয়েছে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ ব্যবহার না করে দেশিয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে মাঠ পর্যায়ে তদারকির করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাজারে দেশিয় গরুর চাহিদা থাকায় আশা করছি খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব‍্যক্ত করেন তিনি।

বিশেষ সংবাদ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ