• নরসিংদী
  • সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ০৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

গল্প। ভূতের খাবার


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪৪ পিএম
গল্প। ভূতের খাবার

আসাদ সরকার: নরসিংদী সরকারি কলেজের পিছনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ইরান কাকার বাড়ি, এই বাড়িতে থাকি প্রায় দুই বছরের বেশি সময় হলো। আমরা ১০ জনের একটি ব্যাচেলর  ম্যাট। পুরনো দিনের বিশাল বড়  বাড়ি। বাড়িতে আছে অনেক পুরনো দিনের একটি বকুল ফুলের গাছ, গাছটির নিচে অনেকটুকু জায়গা পাকা করে মানুষের বসার উপযোগী করা হয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রী প্রাইভেট শেষে এখানে এসে বসে সময় কাটায়। দিনে মানুষের আনাগোনা থাকলেও রাতে তেমন কেউ আসে না এই বাড়িতে।

বাড়ির  চারিদিকে অনেক পুরনো পুরনো ১০-১৫ টি লিচু গাছ, ৭-৮ টি আম গাছ  এবং বাড়ির পিছনে দুটি দোতলা বিল্ডিং ।  বাড়ির পিছনে আছে বড় বড় পাকিস্তান আমলের ৪টি তেঁতুল গাছ। তেঁতুল গাছগুলো দেখে তেঁতুল গাছ বলে কারও মনে হবে না। এমনভাবে  গাছ গুলোতে শ্যাওলা পড়ে আছে মনে হবে অন্য কোন প্রজাতির গাছ। পাশে পাকিস্তান আমলের আরও একটি  দোতলা বিল্ডিং, পরিবারে লোক অসংখ্য কম। কেউ চাকরি করে, কেউ ব্যবসা, কেউ পরিবার নিয়ে দেশের বাহিরে, সম্পূর্ণ বাড়িতে দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া।

আমরা ব্যচলার আর একটি পরিবার। তেতুল গাছের সাথের বিল্ডিংয়ে আমরা থাকি দুতলায় ঠিক তার নিচে একটি পরিবার থাকে। আমাদের পাশে অপজিশনে ইরান কাকার ছোট ভাই থাকে। বাসার ছাদ থেকে গাছের  তেতুল ও লিচু খুব সহজে পাড়া যায়।  মাঝে মধ্যে গাছ থেকে ম্যাচের ছেলেরা তেতুল পেড়ে খালাকে দিতো আর খালা তেঁতুল দিয়ে মজা করে টক তরকারি রান্না করতো,  খুব ভালো লাগতো। সামনে কোরবানি ঈদ। ঈদের ছুটিতে সকলে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শনিবার ৬ জন চলে গেছে ঈদের আগে আর আসবে না।  বাকিরাও  একে এক করে এর মধ্যে ঈদের দুই দিন   সবাই নাড়ীর টানে বাড়ির পানে চলে গেছে। বাকি রইলাম আমি।

একটি প্রাইভেট স্কুলে জব করি, আমার স্কুল ছুটি না হওয়ায় আমার বাড়িতে যেতে দেরি হল। স্কুলে ছুটি দেয়নি, দিলে হয়তো আমি সবার আগে ছুটে  যেতাম। ইতি মধ্যে নিচের যে ভাড়াটিয়া ছিলো তারা সহ পরিবারে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে চলে গেছে । পুরো বিল্ডিং জুড়ে আমার একা রাজত্ব। ঈদ ছুটি আসলে শহরের লোক সংখ্যা খুব কম থাকে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে চলে যায়। আমি কাল স্কুল শেষে বিকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবো। দিন শেষে আস্তে আস্তে  সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো,  জোনাকী পোকার ঝিঁঝি ডাক ছাড়া বাড়িতে আর কোন শব্দ নেই। নেই তেমন কোন আলো। নেই কোন জনবলের কোলাহল।

যে কেউ সন্ধ্যায় এত বড় বাড়িতে একা এলে ভয় পাবে। গাছের পাতা গুলো নিরব ভুমিকা পালন করছে। এমন ভূমিকা যেমন বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে গবেষণার জন্য বৃক্ষরাজী নিরবতা ভূমিকা পালন করছে। কোথাও একটু পাতা শব্দ নেই। সন্ধ্যা হতেই আমার ভিতরে অনেক ভয় কাজ করতেছে। এই বয়সে কখনো কোথাও একা থাকা হয়নি আমার, এত বড় বাড়িতে কিভাবে একা একা থাকি?  না থেকে ও কোন উপায় নেই। রাতের খাবার শেষ করে, জামা কাপড় গুছিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি,  শোয়ার আগে দোয়া কালাম পড়ে নিজের শরীরের ফুঁ দিয়ে নিলাম। চোখে  হালকা ঘুম আসতে হঠাৎ একটি শব্দ হলো রান্না ঘরে। মনে হচ্ছে কেউ কিছু খাচ্ছে, রান্না ঘরে। 

আজকে খালা আবার গোশত রান্না করে দিয়ে গেছে একটু বেশি পরিমাণে। আমি খেয়ে শেষ করতে পারনি। ভাবলাম বিড়াল হয়তো কিছু খাচ্ছে রান্না ঘরে। কিন্তু শব্দটি শুনে মনে হচ্ছে কোন মানুষ কিছু খাচ্ছে।  আবার চামচ নিচে পড়ার একটি শব্দ হলো।

আমি একটু ভয় পেলাম। কেউ রুমে নেই,  খাচ্ছে কে? সাহস করে লাইট জ্বালিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি কেউ নেই।  কিন্তু ভয়টা আরও বাড়তে লাগলো। আমার শরীর থেকে চিকন ঘাম দিয়ে পানি বের হচ্ছে।  ভয়ের ভাষাটা লিখে  প্রকাশ করার মত নয়। আস্তে করে রান্না ঘরে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। 

আবার একই শব্দ এবার মনে হচ্ছে দুই তিন জন মিলে কিছু খাচ্ছে এবং কেমন একটি আওয়াজ হচ্ছে। ভয়ে ওঠার সাহস হচ্ছে না। তারপর ও  আবার লাইট জ্বেলে রান্না ঘরে গেলাম। কিছু নেই,  কিন্তু তিনটি প্লেটে কিছু ভাত আর রান্না করা গোশত।

আমার হাত পা সমামে কাঁপতে লাগলো।
এক ঠোঁটের সাথে আর ঠোঁট মিশে যাচ্ছে। এমব সময় লাইটি বন্ধ হয়ে গেছে।  আমি আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। একটু শোঁ শোঁ আওয়াজ আমার কানে আসলো।  আমি দুটি চোখ বন্ধ করে দরজা খুঁজতে লাগলাম। কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ একজন আমাকে বললো 
কে তুই? 

দুই বার এসে আমাদের খাবার সময় নষ্ট করলি!
আমি কিছু না বলে মোবাইলের লাইট জ্বালাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছু কাজ হচ্ছে না।

আবার বললো কি হলো জবাব কোথায়?
আমার গলা শুকিয়ে গেছে, মুখে কোন কথা বলতে বের হচ্ছে না। কোন সূরা মনে করতে পারতেছিনা।
এবার দুই চোয়ালের দাঁত ভেঙে যাওয়ার অবস্থা।  খুব সাহস করে চোখ খুলে দেখি তিন জন মানুষ সাদা পোশাক পড়া আমার সামনে, অনেক লম্বা,  কালো মুখ বিবর্ণ চেহারার অধিকারী মাঝ বয়সের, তারপর আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। এখানে ফিট।

সকালে খালা এসে আমাকে তুলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসা দেওয়ার পর আমার জ্ঞান ফিরে। এই ঘটনার পর প্রায় দুই মাস অসুস্থ ছিলাম।

সাহিত্য বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ