হলধর দাস: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, বাংলা ভাষায় যত বিদেশী শব্দ আছে, পৃথিবীর আর কোন ভাষায় তা নেই । আমাদের কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন 'এই যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এটা আমাদের এক ধরণের অহংকার। '
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা মানে নিজের অস্তিত্বকে সনাক্ত করা । আর সনাক্ত করতে হলে আমাকে আমার মায়ের ভাষায় কথা বলতে হবে। বাংলা ভাষা বিশ্বব্যাপী পরিভ্রমণ করছে। কিরগিস্থান, কাজাকিস্তান, আফগানিস্তান, হিন্দুস্তান হয়ে এই বাংলাদেশে স্থান করেছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেও এর পরিভ্রমণ শেষ হয়নি। আমাদের দেশ থেকে লুন্ঠনকারী ইংরেজরাও আজ তাদের দেশে বাংলা টাউন বানিয়েছে। তারা আজ বাংলা চর্চা করছে। নিউইয়র্কেও বাংলাভাষা সাহিত্যের চর্চা হচ্ছে। বাংলাভাষার ভিতরেও ভাষা আছে। সেই ভাষাগুলোর মধ্যে একটি মৈত্রী আছে। এগুলোর মাধ্যমেই বাংলাভাষা আমাদের জাতীয় ভাষা হয়েছে ।
পড় বই, গড় দেশ" প্রতিপাদ্যে নরসিংদীতে
১০ দিনব্যাপী বইমেলায় সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ভাষিক জাতিসত্তা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথা সার্বভৌমিক জাতিসত্তা বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি সংবিধান দেয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন জাতি এত দ্রুত সংবিধান লাভ করতে পারেনি। দিয়েছেন গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা।
তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবচাইতে বেশি ভাষা জানতেন। তিনিই প্রথম বলেছিলেন পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষি লোকের সংখ্যা বেশি। এই বাংলাভাষাই একদিন হবে আমাদের রাস্ট্রভাষা। এই কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ বাঙালিরা কলকাতায় প্রথম একত্রিত হয়েছিল রাস্ট্রভাষা বাংলা করার জন্য। আর তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বিশেষ অতিথির ভাষণে এমপি এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারায় আমরা বাংলাদেশকে যেমন বদলে দিব ঠিক তেমনি নরসিংদীকেও আমরা বদলে দিবো। নরসিংদীতে বইমেলার সুন্দর আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নরসিংদীতেও আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে এবং রয়েছে। এভাবে বই মেলার আয়োজনের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং নরসিংদীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখবো।
সভাপতির ভাষণে জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, বই মেলাকে কেন্দ্র করে এই অবহেলিত স্থানটিতে আজ নবজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের সকল চর্চাই এখানে হয়েছে। এখন থেকে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র হিসেবে মেলার এই স্থানটিকে আমরা ব্যবহার করবো। আমি আজ থেকে এটাকে "একুশের মুক্ত মঞ্চ " হিসেবে ঘোষণা করলাম। সাংস্কৃতিক চর্চা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সকলের জন্য এটা উন্মুক্ত থাকবে। খুব শীঘ্রই এবিষয়ে একটা কমিটি করে দিব।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল)কে এম শহীদুল ইসলাম সোহাগ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার নবধারা শিক্ষা পরিবারের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন অনিক।
উল্লেখ্য, আয়োজিত বইমেলায় ঢাকা ও স্থানীয় প্রকাশনীসহ মোট ৭০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ টি বুকস্টল স্থাপিত হয় । এবারের বই মেলায় তুলনামূলকভাবে বই বিক্রি ছিলো ঢাকায় অনুষ্ঠিত বই মেলার চাইতেও বেশী। বই পড়া মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতিদিনই স্থানীয় কৃষ্টি-কালচার এর উন্নয়ন, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিতর্ক, কুইজ, সেমিনার ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ছিলো এই বই মেলায়।
এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পগোষ্ঠীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট ছিলো বই মেলা প্রাঙ্গন।