স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট এলাকার একটি মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম মাইশা আক্তার (১০)।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মাইশা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাইশা আক্তার (১০) সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার ডাইং শ্রমিক নেছার উদ্দিনের মেয়ে। সে মাদ্রাসাটির আবাসিক ছাত্রী হিসেবে মক্তব ২য় শ্রেণিতে পড়ত।
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে একই মাদ্রাসার অন্য একটি শৌচাগার থেকে আফরিন আক্তার (১৬) নামের আরও ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল। আফরিন আক্তার মাধবদীর দড়িগাজীরগাঁও এলাকার ডালিম মিয়ার মেয়ে ও মাদ্রাসাটির আলিম প্রথম বর্ষের (উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষার্থী ছিল।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে আসরের নামাজ পড়ছিল সবাই। ওই সময় মাদ্রাসার ভেতর থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যায়। ভয়ে ও আতঙ্কে ছাত্রীরা সব দৌড়াদৌড়ি করছিল। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে ওই শৌচাগারের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, মাইশা তার ওড়নায় ভেন্টিলেটরের রডে ঝুলে আছে।
ওই অবস্থা থেকে নামানোর পর দেখা যায়, তখনও সে জীবিত। পরে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পরপরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাইশার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাবা নেছারউদ্দিন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য মাইশার হাতে ঘরে রান্না করা খাবার তুলে দেন। দুপুরে পরিবারটির সবাই পলাশের ঘোড়াশালে আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। সেখানে থাকা অবস্থাতেই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নেছারউদ্দিনের মুঠোফোনে মাদ্রাসার এক হুজুরের কল আসে।
মুঠোফোনে তিনি জানান, মাইশাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, আপনি দ্রুত আসেন। পরে মাইশার মা-বাবাসহ পরিবারটির কয়েকজন সদস্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। সেখানে গিয়ে মাইশাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তার কপাল ও গালসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তারা।
মাইশার বাবা নেছার উদ্দিন বলেন, মাদ্রাসার ভেতরে কিভাবে কি হয়েছে, আমরা কিছুই জানি না। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমাকে ফোন করে মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, মাইশাকে অসুস্থ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, আপনি দ্রুত আসেন। আমি সেখানে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। নিজে দেখেছি, নার্সরাও জানিয়েছেন, কপাল ও গালসহ তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। আমাদের ধারণা, তাকে আঘাত করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমি মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
মাইশার মা রুমা বেগমের অভিযোগ, ১০ বছরের একটি শিশু কিভাবে গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করতে পারে? আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্নই এর প্রমাণ। মাদ্রাসার হুজুররাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোস্তফা কামাল উদ্দিন খান জানান, শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁর গলায় ফাঁসের আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁর সঙ্গে ঠিক কি ঘটেছে, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আহসানুল্লাহ জানান, মাইশা নিজের ওড়নার সাহায্যে শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের রডে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এত অল্পবয়সী একটি শিশু কেন আত্মহত্যা করলো খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানতে পেরেছি, তাঁকে সঙ্গে না নিয়ে বাবা-মাসহ পুরো পরিবারটি ঘোড়াশালে আত্মীয়বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল।
এতে কষ্ট পেয়ে মাইশা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। এর আগে তাকে স্বাভাবিকই থাকতে দেখেছে সবাই। সকালে তার বাবা এসে হাতে খাবার দিয়ে গিয়েছিল, দুপুরে অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছে সে।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকীবুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন , 'বৃহস্পতিবার রাতেই খবর পেয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম শহিদুল ইসলাম সোহাগসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। শুক্রবার দুপুরে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে শিশুটির লাশের ময়নাদন্ত চলছে। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও মাদ্রাসাটির শৌচাগারের ভেতর থেকে অন্য একজন শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল।'