• নরসিংদী
  • শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ০৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

নূরুল ইসলাম নূরচান-এর অণুগল্প : সংসার


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:১৫ এএম
নূরুল ইসলাম নূরচান-এর অণুগল্প : সংসার

নূরুল ইসলাম নূরচান 

'সহজ-সরল সৎ মানুষটা এতটা কঠিন হলো কি করে?' ভেবে কূল কিনারা পায় না তসলিমা বেগম। ঘটনাটি ঘটেছে আজ থেকে একমাস আগে। তার তেমন কোনো স্বজন নেই যে, বিষয়টি খোলসা করে বলবে। পাঁচ সদস্যের সংসার ছিল তাদের। বর্তমানে চলছে চার সদস্য নিয়ে। চার সদস্যের ভরণপোষণ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে তসলিমা বেগম। 

গত এক মাসের মধ্যে তসলিমার কাছে যা কিছু সঞ্চয়   ছিল তা নিজের এবং ছেলে মেয়েদের পেছনে খরচ হয়ে গেছে। খরচ তো হবেই। কারণ, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। তার উপর আবার সবকিছুই বাজার থেকে কিনে খেতে হয়। এখন কিভাবে সে সংসার চালাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। এক কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন তিনি। 

তাদের ভিটেবাড়ি ছাড়া চাষযোগ্য কোন জমিজমা নেই।  তসলিমা বেগমের স্বামী লুৎফর রহমান ১৫ হাজার  টাকা বেতনে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাদের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাকি দুজনও পড়াশোনা করেন। তসলিমা বেগম গৃহিণী। এই ১৫ হাজার টাকায় যাদের সংসার কোনমতে চলে যাচ্ছিল। 

বেশ কিছুদিন যাবৎ বড় ছেলে এবং মেয়ে বায়না ধরেছে, তাদেরকে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে দিতে হবে। মোটামুটি ধরনের অ্যান্ড্রয়েড দুটি মোবাইল ফোন কিনতেও বেশ কিছু টাকা লাগবে। এদিকে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। 

একদিন রাতে লুৎফর রহমান হতাশার গলায় তসলিমাকে বলল, 'ছেলে মেয়েদের এসব আবদার আমি কীভাবে পূরণ করব?' তসলিমা বলল, তাদের আবদার পূরণ না করেই বা উপায় কী!'

লুৎফর রহমান প্রতিদিন বাড়ি থেকে গিয়ে অফিস করতেন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সকালে বাড়ি থেকে গিয়ে আর ফিরে আসেন নি সে। লুৎফর এর কাছে একটি বাটন মোবাইল ফোন ছিলো, সেটিও বন্ধ। আত্মীয়স্বজনদের বাসা বাড়িতে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। নাহ, কোথাও সন্ধান পাওয়া গেল না। 

এরপর একমাস অবধি  বাড়িতে এক রকম শোকের মাতম চলছে। এর মধ্যে মেয়েটা সবচেয়ে বেশি কাতর হয়ে পড়েছে বাবার জন্য। কান্না জড়িত কণ্ঠে সে তার মাকে মাঝেমধ্যে বলেন, 'মা, বাবাকে যেভাবেই হোক, যেখান থেকে হোক ফিরে আনার ব্যবস্থা কর। প্রয়োজনে আমি মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করে বাবাকে খাওয়াবো।'

তবে ছেলে দুটোর মধ্যে কোন ভাবান্তর খুঁজে পান না তসলিমা। 

ছোট মেয়ের মুখে এসব কথা শুনে তসলিমা আরো ভেঙ্গে পড়েছেন। মেয়েকে কি বলে সান্ত্বনা দেবে তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না তিনি। 

তসলিমা বেগম এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন, তার স্বামী অবশ্যই ফিরে আসবেন।

সাহিত্য বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ