মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিয়ম অমান্য করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এবার নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও নরসিংদীতে বিদ্যুতের পোল, ভবন ও সীমানা প্রাচীরের দেয়াল এবং গাছপালা ইতোমধ্যে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এ ছাড়া বিলবোর্ড, ফেস্টুন, ব্যানার লাগিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা নজরে পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। কেবলমাত্র মাইকিং করে নিজেদের দায় সেরেছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবী, আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তপশিল ঘোষণার পর তারা কাজ শুরু করার কথা নরসিংদীতে তা নজরে আসেনি ।
গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইসি নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রকাশ করে। প্রার্থীরা ২০টি করে বিলবোর্ড স্থাপন করে প্রচার চালাতে পারবেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া লিফলেট ও ফেস্টুন ব্যবহারের সুযোগ আছে। তবে কোনো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু দেখা গেছে, কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী তপশিল ঘোষণার আগেই ২০টির চেয়ে অনেক বেশি বিলবোর্ড বসিয়ে ফেলেছেন। পোস্টারও আছে চারদিকে। এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন ও এনসিপির প্রার্থীরা। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণাও চোখে পড়ছে।
নরসিংদী জেলা শহরের জেলখানা মোড়ে ফ্লাইওভারের একটি নির্মাণাধীন পিলারে টানানো আছে , নরসিংদী-১ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী খায়রুল কবির খোকনে পক্ষে ভোট চেয়ে মাঝারি আকৃতির বিলবোর্ড। এছাড়াও মোড়ের চারপাশে বিভিন্ন আকৃতির বিলবোর্ড নজরে আসে। তাছাড়া সদর উপজেলা মোড়, রেলওয়ে স্টেশন, আরশিনগর, বাজির মোড়, সঙ্গীতা মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, পৌর ঈদগাহ, রজনীগন্ধ্যা চত্বর শালিধা চাররাস্তার মোড়, ইউএমসি মোড়, নাগরিয়া কান্দি ব্রিজ, ভাগদী মোড় ও শাপলা চত্বর মোড় পুরো নরসিংদী শহর ছেয়ে গেছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে। খোকন সমর্থক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের 'সৌজন্যে' লাগানো প্রতিটি বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট ও দোয়াপ্রার্থী হিসেবে 'নরসিংদী-১ আসনের সর্বস্তরের জনগণ' -এর কথা বলা হয়েছে।
'তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের পক্ষে হোক’ এমন স্লোগান সংবলিত আরও কয়েকটি মাঝারি আকৃতির বিলবোর্ড চোখে পড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহেপ্রতাপ, পাঁচদোনা ব্রিজ পর্যন্ত ও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, রাইনাদী এলাকায়। এছাড়াও খায়রুল কবির খোকনের ধানের শীষের পক্ষে তোরনসহ বিভিন্ন রংয়ের পোস্টার আমার সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে।
নরসিংদী-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলার মজলিশে সূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মো.ইব্রাহিম ভূঁইয়ার দাঁড়িপাল্লার পক্ষেও বিশাল বিশাল বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। শহর জুড়ে ছেয়ে আছে এসকল বিলবোর্ড। এই আসনের গোটা এলাকায় জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড আছে।
বিলবোর্ডের প্রচারণায় পিছিয়ে নেই খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মহিউদ্দিন জামিলও।
তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এখনো নরসিংদী-২ পলাশ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড, তোরণ ও পোস্টার সাটানো অবস্থায় দেখা গেছে। ঘোড়াশাল পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের ছোট ও মাজারি আকৃতির বিভিন্ন বিলবোর্ড ঝুলতে দেখা যায়। তাছাড়া ঘোড়ারশাল টঙ্গী সড়কের বিভিন্ন স্থানেও এই সকল বিলবোর্ড শোভা পেতে দেখা যায়।
তবে এই আসনে জামায়াত ইসলামী প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল উপাধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের সমর্থনে কোথাও কোনো বিল ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার দেখা যায়নি। ইতোমধ্যে তিনি নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্থান থেকে সেগুলো সরিয়ে নিয়েছেন।
পাঁচদোনা-তালতলী সড়কের চরণগদ্ধি বাজারের থেকে পাঁচদোনা মোড়ের দিকে কিছুদূর এগুলোই ড. আব্দুল মঈন খানের ধানের শীষের পক্ষে একটি তোরণ দেখা যায়।
এছাড়াও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মুহসীন আহমেদের হাতপাখার সমর্থনে বিভিন্ন থানে ব্যানার ও বিলবোর্ড দেখা যায়। স্থানে মাঝারি আকৃতির বিলবোর্ড দেখা গেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রিকশা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি ফারুক ভূঁইয়ার।
নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে নির্বাচনী এলাকার কোথাও প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টার বিলবোর্ড নজরে না আসলেও শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে শিবপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে একটি কর্মী সমাবেশ করতে দেখা গেছে। অবশ্য এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ফারজানা ইয়াসমিনকে মৌখিকভাবে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
নরসিংদী-৪ ও নরসিংদী-৫ এ দুটি নির্বাচনী এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে প্রার্থীদের দু-একটি বিলবোর্ড ও পোস্টার দেখা গেলেও তেমন পরিলক্ষিত হয়নি।
এব্যাপারে জেলা রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।