স্টাফ রিপোর্টার : নিয়োগবিধি সংশোধন বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে শহীদ মিনারে স্বাস্থ্য সহকারীদের তৃতীয় দিনেও অবস্থান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির ফলে সারাদেশে ব্যাহত হচ্ছে টিকাদন কর্মসূচি।
সারাদেশে রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। লাগাতার এ কর্মবিরতিতে প্রতিদিন ১৫ হাজার টিকা কেন্দ্রে থেকে প্রায় দেড় লাখ মা ও শিশু নিয়মিত টিকাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে মৃত্যুর ঝুকির পরতে পারে ওই সকল টিকা বঞ্ছিত মা ও শিশুরা।
তবে স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবীকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী বললেও সেটা কেবল তাদের কথা। যদি কথাগুলো তাদের মুখের কথা না হতো সেগুলো মেনে নিতে তাদের কোন বাধা ছিলনা।
অবস্থান কর্মসূচি থাকা স্বাস্থ্য সহকারীরা বলছেন, তারা প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠিকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত করে এ কর্মবিরতিতে যেতে চাইনি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা তাদের এ অবস্থান কর্মবিরতি দিতে বাধ্য করিয়েছেন। তারা বার বার আমাদের প্রস্তাবিত দাবি যৌক্তিক বলে প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস দিয়েই এভাবে দীর্ঘ ২৭ বছর পাড় করছেন। এর জন্য যদি দেশের মা ও শিশুরা মৃত্যুর ঝুকি বারে, তাহলে দায়ি হবেন একমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্ত ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই।
‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে শনিবার ( ২৯ নভেম্বর) থেকে এই অবস্থান কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। তাদের দাবি আদায় জিও (প্রজ্ঞাপন) না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে ফিরবেন না।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তৃতীয় দিনের মতো চলা এ অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের ৬৪ জেলা থেকে হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা ব্যানার, ফেষ্টুন ও মনিপাতা নিয়ে দলে দলে অংশ নেই।
স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতাসংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতন স্কেল পুর্ননিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা ও ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
স্বাস্থ সহকারীরা জানান, আমরা যে কত অবহেলা ও বৈষম্যর শিকার তা বলার ভাষা নেই। ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে এইচএসসি পাশ স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৬তম গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কৃষি বিভাগের এসএসসি পাশ ব্লক সুপারভাইজার যারা তারা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাক।
১৯৮৫ সালের ৫ আগষ্ট সরকারী এক আদেশে তাদের বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেডে উর্ত্তীণ করা হয় ও ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল আবার তাদেরকে ১১তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করে টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সরকারী আদেশে পদবী পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করা হয়।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটানারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্টরা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে ১৯৮৫ সালে সরকারী আদেশের মাধ্যমে তাদেরও ১১তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করে এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষক যারা ১৭তম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদেরও ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়। ২০২০ সালে তাদেরও ১৩তম গ্রেড প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারী করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যারা গৃহপালিত প্রাণীর চিকিৎসা প্রদান করেন তাদেরও ভাগ্য পরিবর্তন হয় কিন্তু সৃষ্টির সেরাজীব মানব শিশু স্বাস্থ্য ও মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পরও বৈষম্যের শিকার হয়ে তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি আজও।
স্বাস্থ্য সহকারীদের নেতারা জানান, আমার প্রকৃত পক্ষে ডির্পাটমেটাল একটা প্রতারনার শিকার। আমাদের অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্য আমাদের সাথে আলোচনায় গিয়েছিলেন এবং কথা দিয়ে ছিলেন। আমার কিন্তু তাদের কথার মর্যাদা দিয়েছি, সফল ভাবে প্রায় ৫ কোটি টিকা প্রদান সম্পূন করে দিয়েছি। কিন্তু কর্মকর্তারা আমাদেরকে দেয়া তাদের কথা রাখেনি।
তারা হুশিয়ার দিয়ে আও বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই আমাদের গৌরবের প্রতিক এ মনিপতাকা গায়ে জরি আজ শহিদ মিনারে ন্যায্য অধিকার নিয়ে অবস্থান কর্মবিরতিতে এসেছি। এটার কিন্তু আমাদের দাবি না কর্মকর্তাদের দীর্ঘ দিনের আশ্রাস ও প্রতিশ্রুতি। আমাদের যৌক্তিক ৬ দফা দাবি জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ না হওয়ার পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব। প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসুচিতে যেতে বাধ্য হবেন। এমকি এখানে আত্মহতি দিবেন এবং সকলে মনিপাতা দিয়ে দাফন হবেন।