• নরসিংদী
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

শিবপুরে কলেজের পাশে বিনোদন পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপ!


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪৬ পিএম
শিবপুরে কলেজের পাশে বিনোদন পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপ!
ছবি : প্রতিনিধি

স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ডিগ্রী কলেজের পাশে গড়ে উঠেছে একাধিক বিনোদন পার্ক। এসকল বিনোদন পার্কে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্ধীদের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলার ভুরভূরিয়া গ্রামের  আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ডিগ্রী কলেজের পাশে তথাকথিত নাদিরা গার্ডেন নামে একটি বিনোদন পার্ক গড়ে উঠেছে। কলেজের দেয়াল ঘেঁষা পার্কটিতে কোনপ্রকার সীমানা প্রাচীর না থাকায় দর্শনার্থীদের সকল কর্মকান্ড শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিগোচর হয়। এর ফলে এগুলোর প্রভাব সরাসরি  শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে। ফলে  শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে । 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কলেজের নির্মাণাধীন হোস্টেলের রাস্তার জায়গা দখল করে পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। পার্কে নিয়মিত উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদেরা যাতায়ত করছে।

এলাকাবাসী জানায়, পার্কের আড়ালে অসামাজিক কার্যকলাপ সংগঠিত  হয়। তাছাড়া বেশ কয়েক দিন আগে কলেজের অনার্স ভবনের পাশে গড়ে উঠা কফি শপের আড়ালে মাদক সেবীদের আড্ডা চলে আসছিল। যার ফলশ্রুতিতে কফি শপটি মাদক কেনা-বেচা ও সেবনকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। এ অবস্থায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে আগুন লাগিয়ে কফি শপটি পুড়িয়ে দেয়।

এরপর থেকে কলেজ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কলেজের আশে পাশে এমন পার্কের নামে গড়ে উঠা মাদকসেবীদের আখড়ার কারণে শিক্ষার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

এর ফলে অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের কলেজে পাঠিয়ে সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতা ভোগতে থাকে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থায় কলেজে উপস্থিতির হার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কলেজের অধ্যক্ষ শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও  শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন।  

এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাত'র নির্দেশে কলেজ এলাকার নাদিরা গার্ডেনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এসময় পার্ক পরিচালনার মত কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শায়রুখ খান পার্কের দুই জন কর্মচারীকে আটক করে নিয়ে আসে। পরে অবশ্য মুছলেখা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ডিগ্রি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, 'কলেজের দুই পাশে গড়ে উঠা  দুটি পার্কের আগত দর্শণার্থীদের দ্বারা আমাদের কলেজের অনেক মেয়েই ইভটিজিং এর শিকার হয়েছে। তাছাড়া পার্কে আসা উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ের খোলামেলা চলা ফেরার কারণে আমাদেরকে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখতে হলে এ  এলাকা থেকে পার্কগুলো অতিসত্ত্বর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া অত্যাবশ্যক। তাই এ এলাকা থেকে পার্ক সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'

কলেজের ইংরেজী শিক্ষক ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, 'গত ১১ মে কলেজের পূর্ব পাশের কফিশপ নামে গড়ে উঠা মাদকের আড্ডাখানায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্য আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্লাস রুম থেকে দেখেছে। এর একটি বিরূপ প্রভাব ছেলেমেয়েদের ওপর পড়েছে। তাছাড়া কলেজের মূলভবনে ক্লাস নিতে গিয়ে যখন ক্লাসের জানালা দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চোখের সামনে কিছু অপ্রীতিকর দৃশ্য দেখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময়  লজ্জায় আর আমাদের মুখ লুকানোর জায়গা থাকে না। এ বিব্রতকর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অতিসত্বর পার্কটি এখান থেকে স্থানান্তর করা আবশ্যক।'

আবদুল মান্নান ভূইয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জালাল আহমেদ বলেন,  '২০০২ সালে এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে  এ অঞ্চলেরই কৃতি সন্তান শাহান শাহীন অত্র কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কলেজের দু’পাশে পার্ক গড়ে উঠায় কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

গত ১১ তারিখের পর থেকে আমরা এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত। অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের কলেজে পাঠাতে রীতিমত ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও  শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়ে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। '

এব্যাপারে কলেজের পাশ্ববর্তী নাদিরা গার্ডেনের মালিক সাইদ বলেন, 'আমার জানা মতে পার্কে কোন অনৈতিক কাজ হয়না বা সেই সুযোগও নেই। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর পার্কের পূর্ব পাশে টিনের বেড়া দিয়ে পার্কের সীমানা ঘেরাও করে রাখা ছিল। এরফলে কলেজের জানালা দিয়ে পার্কের ভিতরের কোন কিছুই দেখা যেতনা। ছাত্রাবাস করার নাম করে কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই বেড়া খুলে ফেলেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রবাসের সীমানা প্রাচীর তোলার জন্য পিলার দিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরেই কিন্তু তারা সেখানে দেয়াল না দেয়ার কারণে পার্কের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ।  প্রতিনিয়তই আমার  পার্কের সীমান্তবর্তী স্থানের মাটি ভেঙ্গে ছাত্রাবাসের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।'

এমতাবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শেষ করতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।

এব্যাপারে শিবপুর মডেল  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাত জানান, 'অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এলকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন বিষয়টির খোঁজখবর নিচ্ছে।' পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ও জানান তিনি।

নরসিংদীর খবর বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ