• নরসিংদী
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

মহানন্দে রিয়াজুল জান্নায় কিছুক্ষণ


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:২২ পিএম
মহানন্দে রিয়াজুল জান্নায় কিছুক্ষণ
ছবি সংগৃহীত

নূরুদ্দীন দরজী 

আল্লাহ পাকের মেহেরবাণীতে জীবনে প্রথমবার হজ্বে গিয়েছি ২০১৮সালে। সে বছর মক্কায় হজ্বব্রত শেষ করে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সঃ) এর র‌ওজায় এসে  র‌ওজা মোবারকে সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে মদিনায় যাই ও অনেক দিন অবস্থান করি। প্রায় প্রতিদিন‌ই আসর নামাজের পর মসজিদে নব্বীর বাব ই সালাম গেইট দিয়ে প্রবেশ করে নবীকে সালাম দেই।

সালাম দিতে প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে পড়তে হয়। অসংখ্য জিয়ারতকারী সালাম দিতে আসেন। লাইনে দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়ার পাশেই মহাপবিত্র "রিয়াজুল জান্নাহ, অবস্থিত। অনভিজ্ঞতা ও  ভিড়ের প্রচন্ডতায় সে বছর" রিয়াজুল জান্নায়,নামাজ না পড়েই দেশে ফিরে আসি। এ কারণে মনে অনেকটাই অশান্তি ও অতৃপ্তি থেকে যায় । চিন্তা করতে ছিলাম আবার কিভাবে যাওয়া যায়।

মহান আল্লাহর রহমতে এক বছর পর‌ই অর্থাৎ ২০২০ সালে সহধর্মিনী, বড় বোন, ভাগিনা ও খালাতো ভাই এর  সাথে উমরাহ পালনের সুযোগ নিয়ে বসি। জানুয়ারি মাসেই আমরা মক্কা মদিনা মনোয়ারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।  ১৫ দিনের প্যাকেজের ৮ দিন মক্কায় উমরাহ সম্পন্ন করে মদিনায় চলে যাই।
মদিনায় পৌছার রাতেই নবীর র‌ওজায় নবীকে সালাম দেই এবং প্রায় প্রতিদিন সালাম দেই। পাশেই রিয়াজুল জান্নাহ দৃষ্টিতে পড়ে, অনেক ভিড় দেখতে পাই।

একদিন এশা নামাজের পর হোটেলে গিয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে এক বন্ধুকে নিয়ে সাহস করে রিয়াজুল জান্নায় নামাজ পড়ার জন্য বের হয়ে পড়ি। অনেক মানুষ আর মানুষের মধ্যেই আস্তে আস্তে লাইনে দাঁড়াই। মসজিদে নব্বীর ৩৯ নম্বর"বাব ই জিবরাইল (আঃ) গেইট (যে গেইট বা দরজা  দিয়ে জিবরাইল আঃ ওহী নিয়ে মহানবীর সাথে দেখা করতে আসতেন )  প্রবেশ করতে থাকি।

কয়েক ঘন্টা চেষ্টার পর অনেকগুলো স্তর  অতিক্রম করে অবশেষে মনে বহুদিনের আকাঙ্খিত আমাদের নবীর দুনিয়ায় রেখে যাওয়া একটুকরা বেহেশত  "রিয়াজুল জান্না,য় প্রবেশ করি। প্রাণ খুলে কয়েক রাকাত নামাজ আদায় করি। মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। মনে দারুন প্রশান্তি পাই।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মক্কার শত্রুদের অত্যাচারে জর্জরিত নবী (সাঃ) মদিনায় হিজরত করেছিলেন। ঐ হিজরতের বাহন ছিল " আল কাসোয়া, নামের ‌একটি উট। বহনে ক্লান্ত উট "আল কাসোয়া, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর যেখান এসে থেমে যায় সেখানেই  খেজুর পাতার সাহায্যে একটি মসজিদ ও একটি কুটির নির্মাণ করা হয় ।  নবী করিম(সঃ)কুটিরে বসবাস করতেন এবং মসজিদে নামাজ পড়তেন।

সেদিনের খেজুর পাতার মসজিদটিই আজকের জগৎ বিখ্যাত মসজিদে নবী। এ মসজিদের অভ্যন্তরেই রয়েছে দুনিয়ার এক টুকরো বেহেশত। সাহাবী আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেন, তাঁর ঘর থেকে মিম্বর পর্যন্ত জায়গাটি তিনি দুনিয়ার বেহেশত হিসেবে " রিয়াজুল জান্নাহ, রেখে গেছেন। যাদের সৌভাগ্য হয়েছে রিয়াজুল জান্নায় প্রবেশ করার তারাই বুঝতে পারেন এটি কত বড় মহামান্মিত জায়গা।

জায়গাটি নবীর কুটির (যেখানে তিনি বর্তমানে শায়িত) হতে মসজিদের মিম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এ জায়গাই দুনিয়ার বেহেশত । এখানে বিভিন্ন নামে ৬টি খুঁটি রয়েছে যার কয়েকটি ওস্তানে হাননালা, ওস্তানে,আয়েশা, ওস্তানে আবুবকর ও ওস্তানে আলী নামে পরিচিত। বলা হয়েছে, যারা একবার এ জান্নায় বা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেন তাঁরা   বেহেশত‌ই থাকবেন অর্থাৎ তাঁদের আর বের করা হবে না। (মহান আল্লাহ আমাদের সকলের প্রবেশ কবুল করুন)
 রিয়াজুল জান্নার এ জায়গাকে দুটিভাগে ভাগ কর হয়েছে। পর্দা দিয়ে প্রায় অর্ধেক মহিলাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এখানে নামাজ পড়ার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ার উপক্রম হয়। তবে এখানে এসে অতি সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ এখানে নবী করিম (সঃ) শুয়ে আছেন। তিনি যে উচ্চতার স্বরে কথা বলতেন তার চেয়ে আমাদের স্বর বেশি হলে এটি হয় বেয়াদবি। 

সেদিন আমার মনের একান্ত বাসনা পূর্ণ হয়েছে। এ জন্য মহান আল্লাহর দরবারে বার বার, হাজারো বার,লাখ কোটি বার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। আল্লাহর হুকুম হলে আবার ও যাবো ইনশাল্লাহ।

লেখক : সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)।

ধর্ম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ