• নরসিংদী
  • মঙ্গলবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ০৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  মঙ্গলবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ০৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
website logo

বাঙালি জাতি সত্তায় অগ্নিঝরা মার্চ


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:২১ পিএম
বাঙালি জাতি সত্তায় অগ্নিঝরা মার্চ
অগ্নিঝরা মার্চ

নূরুদ্দীন দরজী

চলছে অগ্নিঝরা মার্চ। প্রথম সপ্তাহ অতি কান্ত হয়ে । বাঙালি জাতীয় জীবনে এ মাসের রয়েছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। এ মাস খুব‌ই তেজদীপ্ত,স্মরণীয় ও উদীপ্ত। এ মাসে আছে কিছু আনন্দ ,জয়োল্লাস, আবার আছে গভীর শোকগাঁথা। অন্যন্য এগারটি মাসের চেয়ে  মাস আমাদের বেশি হাসি কান্নার সাথে জড়িত। এ মার্চ মাসকে বলা হয় অগ্নিঝরা মাস।

এ মাসে সত্যিই অগ্নি ঝরেছিল। উত্তাপিত হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ। এ মাসের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ২৬ মার্চ।  ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের  ২৬ মার্চের প্রহরে হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

এর পূর্বে ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ জনতার জনস্রোতে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা  দিয়েছিলেন। ,৭ মার্চের ঘোষণায় সাগরে গর্জন উঠেছিল, বাতাস পেয়েছিল ক্ষিপ্র গতি,নদীনালা জলাশয় উঠেছিল ফুলে ফেঁপে। বাঙালির তাজা রক্ত টগবগিযে ঝরে ঝরে আর ও একটি বঙ্গোপসাগর সৃষ্টি করেছিল। তাঁর যুগপৎ ঘোষনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে সারে সাত কোটি মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল।

অগ্নিঝরা মার্চের আর ও অনেক বিশেষ তাৎপর্য আছে। পয়লা মার্চ কুখ্যাত পাকিস্তানী সেনাশাসক ইয়াহিয়া পূর্বে ডাকা ৩ তারিখের জাতীয় সংসদ অধিবেশন মূলতবী ঘোষনা করেন। এ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর হাতে শাসন ক্ষমতা দেওয়ার কথা ছিল। এর প্রতিবাদে মানুষ ফেটে পড়েছিল। ২ মার্চ আমাদের জাতীয় পতাকা দিবস। এ দিন '৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে তৎকালীন ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব বাংলার আকাশে সর্বপ্রথম পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

১১ মার্চ বাংলার বীর সন্তান এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের সংবিধান সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির বাংলা ভাষার কথা। ৫২ এর আগ পর্যন্ত ১১ মার্চ ছিল বাঙালির ভাষা দিবস।
১৭ মার্চ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। 

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টঙিপাড়ায় জন্ম হয়েছিল একটি আগুনের ফুলকির। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির দূত।  ঐ দিনে এ ফুলকির জন্ম হ‌ওয়ায় বাঙালি জাতি পেয়েছে মুক্তির দিশা, পেয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। 

১৯ মার্চ ঢাকার কার্জন হলে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা করেছিলেন একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বাংলার দামাল ছেলেরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৮ সালে এমনি প্রতিবাদে জিন্নাহ সেখানে আর কথাই বলতে পারেনি। বাঙালি নেতা মোঃ শামসুল আলম জিন্নাহর সাথে গভীর তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ বাংলার বাঘ শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাবে ব্রিটিশদের কাছে দাবী করেছিলেন ভারত বর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। আবার এ ২৩ মার্চ‌ই পাকিস্তানের স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁ সংসদ অধিবেশন ও স্থগিত করলে বঙ্গবন্ধু দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেন। এ দিন থেকে অসহযোগ আন্দোলন পুরোদমে আরম্ভ হয়ে যায়।

২৫ মার্চ বাঙালি জাতির কালোরাত। এ রাতে ঢাকার  নিরীহ, নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের উপর পাকিস্তানী হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে। ,অপারেশন সার্চ লাইট,নামে ইতিহাসের জগন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। বেনিয়ারা সর্বত্র নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নৃশংসভাবে বাঙালি নিধন করে। রাতের শেষে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ- প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষনা দেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে নিজেদের দেশ স্বাধীন করে।
 

সর্বোপরি মার্চ মাস বাংলার মানুষের কাছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বহমান। মার্চ মাস জুড়ে থাকে বাংলা ফালগুন চৈত্রের আবহে বসন্তকাল। গাছ গাছালি রঙিন হয় আপন অবয়বে। সবকিছুই স্মরণ করে অতীতে এ মাসের ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক দিকগুলো।আবহমান কাল মার্চ মাস বাংলার মানুষ ও এ জাতিকে করবে অগ্নিসম  উদ্বেলিত। রক্তে জাগাবে অতীত শিহরণ। অগ্নিঝরা মার্চ জানিয়ে দিবে বাংলার অতীত ইতিহাস।

লেখক: সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) 

মতামত বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ