• নরসিংদী
  • শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও শহীদ আসাদ 


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০:০৮ পিএম
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও শহীদ আসাদ 
শহীদ আসাদ। ছবি সংগৃহীত

নূরুদ্দীন দরজী: বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে ও যেকোনভাবে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি শহীদ আসাদের কথা এসে যায়। আসাদকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কথা সম্পূর্ণ হয়না।

আমি জীবনে কখনো  শুনিনি আসাদকে বাদ দিয়ে কেউ বাংলাদেশের কথা বলতে পেরেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে শহীদ আসাদ একান্তই প্রাসঙ্গিক। কারণ   ৫২- এর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়  বিভিন্ন ভাবে এ দেশে আন্দোলন সংগ্ৰাম সূচিত হতে থাকে।

৫৪-  নির্বাচন, ৬২-শিক্ষা বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর  বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ১১ দফার  পথ ধরেই আসে ৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান। ৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানে স্বাধীনতার পটভূমি রচিত হয়। ৫২থেকে ৬৯ পর্যন্ত যে সমস্ত আন্দোলন সংগ্ৰাম হয়েছে শহীদ আসাদের রক্তদানের মধ্যে দিয়ে তা পূর্ণতা পায়। ঢাকার রাজপথের মিছিলে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি আসাদকে গুলি করে হত্যা করে পাষান্ড আইয়ুব খানের পুলিশ।

তিনি শহীদ হন। তাঁর রক্তের স্রোতধারা প্রবাহিত হয় বাংলার আনাচেকানাচে। এ পবিত্র রক্তদানের প্রতিশোধ স্পৃহা জাগে তৎসময়ে সারে সাত কোটি বাঙালির মাঝে। সেদিন থেকেই তারা বজ্রকঠিন শপথ নেয় যে কোন মূল্যে হানাদার পাকিস্তানীদের বিতারিত করে বাংলাকে স্বাধীন করবে।

চতুর্দিকে আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে যায়। সমগ্ৰ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এর মাত্র তিন দিন পর ২৪ জানুয়ারি ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউটের ছাত্র মতিউরের তাজা রক্তে আবার রাজপথ রঞ্জিত করে। আন্দোলন সংগ্রামের স্রোত চূড়ান্ত রুপ পায়।

সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে-। বাংলার সর্বত্র বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বৈরাচারীদের বিতারিত করার পথে ধাবিত হয়। আন্দোলন সংগ্রামের বিভীষিকাময় অবস্থায় আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে বাঙালির অবি সাংবাদিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

বলতে গেলে সংগ্ৰামী অগ্নিদগ্ধ জনতা বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে ছিনিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধু বের হয়ে এলে স্বাধীনতা আন্দোলন আর ও শক্তিশালী হয়।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পেয়ে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। এর‌ই ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭১। ৭১ এর ৭- মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে আমাদের স্বাধীনতার নির্দেশনা স্পষ্ট হয়ে যায়। সবার এক কথা স্বাধীনতা ! স্বাধীনতা!! সারা বাংলায় শ্লোগান উঠে "বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো  বাংলাদেশকে স্বাধীন করো,।

আসাদের আত্মদান‌ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শক্তিশালী প্রেক্ষাপট বা পটভূমির সৃষ্টি করেছিলো। আসাদ ছিলেন খুব‌ই স্বাধীন চেতা। দীর্ঘ পরাধীনতার গ্লানি আসাদের সুন্দর মনকে বিষময় করে তুলেছিলো। সদা সর্বদা তিনি চিন্তা করতেন বাংলাদেশ নিয়ে, দেশের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষকে নিয়ে।

আসাদ ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী, নিষ্ঠাবান অদম্য একজন দেশ প্রেমিক। অবহেলিত সাধারণ মানুষের জন্য ভালোবাসা ও দরদ ছিলো অপরিসীম। তিনি ছিলেন সদালাপী, সহজে অন্যের সাথে মিশে যেতে পারতেন। তিনি অদমনীয় ও বলিষ্ঠ কঠিন দৃঢ়তার অধিকারী ‌।

আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষকে শহীদ আসাদকে আর ও ভাবতে হবে। দীর্ঘ পরাধীনতার লজ্জা ও শোষণ বঞ্চনার অবসান করতে তাঁর তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার কথা হৃদয়ের গভীর থেকে চিন্তা করতে হবে। চিন্তা করতে হবে আসাদের আত্মদানের তুলনায় আমরা তাঁকে কতটুকু মূল্যায়ন করতে পারছি। 

প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি দেশব্যাপী শহীদ আসাদ দিবস পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকার আসাদকে মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্ৰহণ করে থাকেন। এ দিবসে দেওয়া হয় বিবৃতি। অনেক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এ সমস্ত কর্মসূচিতে যোগদানসহ সকলকে আর ও এগিয়ে আসতে হবে আমাদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের নিরিখে।

শহীদ আসাদ দিবস স্মরণে-

লেখক : সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কবি ও প্রবন্ধকার।

মতামত বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ