• নরসিংদী
  • মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৭ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ০৭ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

গল্প। টাইসন। আসাদ সরকার


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৩৮ পিএম
গল্প। টাইসন। আসাদ সরকার

তীর্থ ৭ম শ্রেণির ছাত্র। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। তার বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। বাড়ি এবং স্কুলের মাঝে একটি চর আছে যেখানে কোনো গাছপালা নেই । চরের কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়েই তাকে স্কুলে যেতে হয়। প্রচন্ড তাপদাহ চলছে দেশে। তীর্থ প্রচন্ড গরমে ঘামে ভিজে যায়। মনে হয় যেন সবে মাত্র গোসল আসলো। প্রচুর পানির পিপাসা লাগে তার। তাই সে স্কুলে যাওয়ার আগে নিয়মিত স্কুল ব্যাগে ছাতা এবং পানির বোতল গুছিয়ে রাখে। তার স্কুল শুরু হয় ১১ টায়, তাই তীর্থ সকাল ১০ টায় রওয়ানা হয়। প্রতিদিনের চেয়ে আজকে তাপমাত্রা অনেক বেশি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও সে স্কুলে যাচ্ছে। হঠাৎ পথের মাঝে একটি কুকুর তার সঙ্গী হলো। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর সে লক্ষ্য করলো, কুকুরটি জিহ্বা বের করে খুব কষ্ট করে পথ চলতেছে। আর বারবার তার ব্যাগের পানির বোতলের দিকে তাকাচ্ছে। তীর্থ বুঝতে পারলো কুকুরটির পানির পিপাসা লেগেছে। তাই সে নিজের চিন্তা না করে ব্যাগ থেকে পানির বোতলটি বের করে 

কুকুরকে পানি পান করালো। কুকুরটি তার পিছনে পিছনে স্কুল পযর্ন্ত গেলো। তীর্থ স্কুলে গেটের ভিতরে চলে গেলো। দারোয়ানের কারণে কুকুর টি ভিতরে ঢুকতে পারলো না। ক্লাস শেষে বিকাল চার টায় তীর্থর স্কুল ছুটি হলো। কুকুরের কথা তার মনে ছিল না। কিন্তু কুকুরটি স্কুল গেটের বাহিরে তীর্থর জন্য সারাদিন অপেক্ষা করতে লাগলো।  কুকুর একমাত্র প্রাণী যে খুবই প্রভু ভক্ত।  তীর্থ কে স্কুলের গেটে দেখা মাত্র কুকুরটি দৌড়ে এলো।  তার শরীরের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। যেন শতটা অপরাধ করে ফেলেছে দারোয়ান। লেজ নেড়ে নেড়ে তীর্থের কাছে নালিশ করছে তাই।

তীর্থ কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। সে কুকুর টিকে সরিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো। একটু হাঁটার পর শুনলো কুকুরটি  আবার ঘেউ ঘেউ করছে। তখন বলল, তুই যাবি আমার সাথে? তাহলে বাড়ি চল। খুব খিদা পেয়েছে? নারে?আমার প্রচুর খিদে পেটে।
হঠাৎ তীর্থের মনে হলো আমি তো দুপুর টিফিন করলাম। কিন্তু সে? 
হয়তো সে কিছুই খায়নি, কারণ আমার মতো তো তার এমন টাকা নেই। কে দিবে তাকে খাবার? একথা বলে পকেটে হাত দিয়ে দেখলো মাত্র পাঁচ টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে একটি রুটি কিনে নিজ হাতে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ালো কুকুরকে। দুজন এমন ভাবে পথ চলছে যেন হাজার বছরের পরিচয়। দুজন মনের মাধুরি মিশিয়ে গল্প করতে করতে বাড়িতে চলে আসলো। 

তীর্থ নব বন্ধুটিকে বাড়িতে নিয়ে এনে হাত পা ধুয়ে দিয়ে প্রথমে তাকে কিছু খেতে দিলো। এবং তীর্থ নিজে খেতে বসলো আর মায়ের সাথে আজকের ঘটনা খুলে বললো। মা বললো, বাদ দাও। এসব কুকুর টুকুর বাড়িতে পালা করা যাবে না। মাকে অনেক কষ্টে রাজি করালো। ছেলের আবদার কোন মা কি ফেলে দিতে পারে? মা রেগে বললেন, আচ্ছা দেখা যাবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হলো। মহাশয় রাতে বারান্দায় শুয়ে খুব আরামে আছে। কোন ঘুম নেই চোখে, সারা বাড়ি পাহারা দিতে লাগলো। যে কেউ বাড়ির ভিতরে ঢুকলেই ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয়। তীর্থর মা রাগ করে একবার লাঠি দিয়ে আঘাত করে বাড়ির বাহিরে দিয়ে আসে। কিন্তু সে অল্প সময় পর আবার বাড়িতে ফিরে এলো। যে মানুষটি তার জীবন বাঁচালো, খাবারের ব্যবস্থা করলো, সেই বন্ধুকে ছেড়ে সে কি করে চলে যাবে। সারা রাত তার বন্ধুর বাড়ি পাহারা দিলো। একজন দক্ষ দাড়োয়ানের মত সম্পূর্ণ বাড়ি পাহারা দিলো। একজন দাড়োয়ানের পক্ষেও এভাবে  সম্ভব হতো না। সকালে তীর্থ দরজা খুলতেই তার সামনে এসে কুকুরটি হাজির। লেজ নেড়ে নেড়ে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। হয়তো বলছে, আমি সারারাত তোমার বাড়ি পাহারা দিয়েছি, সারা রাত আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় বসে ছিলাম। সে বললো, বুঝতে পারছি, তোকে আর কোথাও যেতে হবে না। আজ থেকে এই বাড়িতে থাকবি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, আজ থেকে তোর নাম 'টাইসন।'

সাহিত্য বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ