স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীর পলাশে পরকীয়া প্রেমের জেরে নয়ন চন্দ্র মজুমদার (২৮) হত্যা মামলার প্রধান আসামী ফয়সালকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জেলা ডিবি পুলিশের একটি অভিযানিক দল গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ফয়সাল ফরাজি (২৮) গাজীপুরের কালীগাঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের মৃত নিজাম ফরাজির ছেলে।
অপরদিকে নিহত নয়ন চন্দ্র মজুমদার (২৮) চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থানার উত্তর মগধরা গ্রামের দিলাল চন্দ্র মজুমদারের ছেলে। তিনি পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে একটি ভাড়া বাসায় থেকে পার্শ্ববর্তী ঘাগড়া গ্রামে নিজের সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে পলাশের জিনারদী ইউনিয়নের কাটাবের সড়কের পাশে থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় নয়নের মরদেহ উদ্ধার করে পলাশ থানা পুলিশ। পরে মরদেহে পরিচয় সনাক্ত করে পুলিশ। এরপর হত্যা রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। নিহত নয়ন চন্দ্র মজুমদারের মোবাইলের কললিস্ট থেকে এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে পলাশ থানা পুলিশ।
পলাশ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) নিহত নয়ন চন্দ্র মজুমদারকে তার পরকীয়া প্রেমিকা ফারজানা আক্তার মিথিলা (২৪) ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মিথিলা ও তার স্বামী ফয়সাল ফরাজি পরিকল্পিতভাবে নয়নকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে নিহত নয়নের মরদেহ বস্তাবন্দি করে খাটের নিচে রেখে দেয়। এদিকে মরদেহ পচে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে, বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাতের কোনো এক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাযোগে মরদেহটি বহন করে নিয়ে উল্লিখিত জিনারদী ইউনিয়নের কাটাবের সড়কের পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। পরদিন বস্তা দেখে সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পলাশ থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
তদন্তে জানা যায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে মিথিলা ও তার স্বামী ফয়সাল নয়নকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাতের আঁধারে কাটাবের সড়কের পাশে ফেলে যায় তারা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা ঝর্না রানী মজুমদার বাদী হয়ে পলাশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং নিহতের মোবাইলের কল লিস্ট ধরে তার পরকীয়া প্রেমিকা ফারজানা আক্তার মিথিলাকে গ্রেফতার করে। এ খবর জেনে মিথিলার স্বামী আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করে সোমবার সকালে তাকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর মিথিলা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয় এবং রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) নরসিংদী বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন , পরকীয়ার জেরে নয়ন হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী ফয়সালের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হত্যার পর পর ফয়সাল গা ঢাকা দেয়। আজ (সোমবার) সকালে পলাতক ফয়সালে কালীগঞ্জে ঈশ্বরপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলা অপর আসামীদ্বয় নিহত নয়নেন পরকীয়া প্রেমিকা ফারজানা আক্তার মিথিলাকে শুক্রবার রাতে এবং গতকাল শনিবার সন্ধ্যা অটোরিকশা চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা উভয়ে ১৪৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।