হলধর দাস : সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশের ন্যায় নরসিংদীতেও বিএনপি নড়েচড়ে বসেছে। তবে বিএনপির লেবাস ধরে কিছু নব্য নেতা-কর্মীর কার্যক্রমে জেলা জুরে সমালোচনার ঝড় বইছে। সকালে মামলা ড্রাফট দুপুরে প্রত্যাহার : নরসিংদীতে বিএনপির মামলা নাটক বেশ জমে উঠেছে ।
সকালে আওয়ামীলীগের ধনাঢ্য ব্যক্তি/নেতার নামে মামলা আরজি লিখে বিকালের আগেই তা প্রত্যাহার করছে । এই মামলা মামলা নাটক নিয়ে নরসিংদী শীর্ষ নেতা-কর্মীরাও বেকায়দায় রয়েছে। কেউবা এটাকে মামলা বানিজ্য বলে আখ্যা দিচ্ছে । কেউবা ফেইস বুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে " জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকন ও সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহির পরামর্শ ছাড়া কোন মামলা করা যাবে না। " বিএনপি'র পক্ষ থেকে কেউ বিরোধী কারও নামে মামলা দায়ের করলে উল্লেখিত দুই নেতার অনুমতি নিতে হবে।
নরসিংদীর শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং শিল্পপতিদের নামে বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে মামলা দাখিলের কয়েক ঘন্টা যেতে না যেতেই সেই মামলার অভিযোগ রহস্যজনক কারণে ফের প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। এমনই একটি আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা বুধবার(২৮/৮/২০২৪) নরসিংদীর আদালত এলাকায় হয়েছে।
নরসিংদীর শীর্ষ পর্যায়ের দু’জন শিল্পপতির নামে সকালে মামলা দাখিল করেছে কিন্তু এই মামলা দুপুরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে।
এই দুই শীর্ষ শিল্পপতিদের মধ্যে একজন হলেন নরসিংদীর শিবপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ধনাঢ্য শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওরফে ডলার সিরাজ । অপরজন হলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লা। এ দুজন নরসিংদীর শীর্ষ পর্যায়ে শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম।
এই দুই শীর্ষ ব্যক্তির নামে বুধবার সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনা দেখা দেয়। এর কারণ হলো- এই দুই ব্যক্তির নামে সকালে একটি হত্যা মামলাসহ আগুন দিয়ে গাড়ি পুড়ানোর অভিযোগে একাধিক মামলা উপস্থাপন করা হয়।
শিবপুরের ভরতেরকান্দী এলাকার মোঃ আরিফ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম মোহন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নরসিংদীর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারী ৪৫জনকে আসামী করে নরসিংদীর বিজ্ঞ শিবপুর আমলি আদালতে একটি সি.আর মামলার আর্জি দাখিল করে। একই দিনে শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লার নামে একটি হত্যাকান্ডের অভিযোগ এনে মাধবদীর রুবিনা আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যামামলার আর্জি দায়ের করে। এই দুই মামলায় আরো অনেক ব্যক্তিকে আসামী করা হয়।
এই মামলা দুটি আদালতে দাখিলের পর দুপুর হওয়ার আগেই নরসিংদী শহরজুড়ে জনমুখে ছড়িয়ে পড়ে। আদালতপাড়ায় ব্যপক গুঞ্জন, আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মামলা দায়ের করার ঘন্টা তিনেক পরেই মামলা দুটি প্রত্যাহার করার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কী কারণে সকালে মামলার এজাহার দাখিল করে দুপুরেই মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ কেউ বলতে পারছেন না। আদালতের আইনজীবীরাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এছাড়া এই শীর্ষ শিল্পপতি ছাড়াও গত কয়েকদিনে অন্ততঃ ৭/৮টি মামলা- মামলার নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। যা মামলার প্রক্রিয়া করে জমা দেয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সে মামলা সমঝোতায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো; সাবেক মন্ত্রী এমপিদের সাথে নরসিংদীর বর্তমান জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের নামেও বিভিন্ন অভিযোগ এনে মামলা ড্রাফট করার ঘটনা ঘটেছে। আর এই মামলা দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে রহস্যজনক কারণে প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নরসিংদী থানার দুজন এসআই এবং ডিবি পুলিশের কর্মকর্তাদের নামে একাধিক মামলা প্রক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মামলাগুলো আদালতে নথিভুক্ত করার আগেই উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ঘটনাও ঘটছে। টানা গত কয়েকদিন নরসিংদীর আদালপাড়ায় আওয়ামী লীগের এমন শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় পর্যায়ের আমলাদের নামে মামলা হওয়া এবং প্রত্যাহার, সমঝোতার ঘটনায় জনমুখে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
তাছাড়া, গত বুধবার (২১ আগস্ট) সাবেক শিল্পমন্ত্রী এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নরসিংদী জেলা পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নাম সম্বলিত ১১৪ জনকে আসামী করে হত্যার অভিযোগ এনে একটি এজাহার দাখিল করার পর অজ্ঞাত কারণে মামলাটি উঠিয়ে নেয়। শোনা যাচ্ছে এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। সেই কারণে নরসিংদীর সিনিয়র আইনজীবীগণের চাপে এড. নুরুল মজিদ হুমায়ুনকে বাদ দিয়ে এজাহার দাখিল করতে বাদীকে বাধ্য করে।
এসব ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম বলেন, বাদী মামলা আদালতে দাখিল করে এবং বাদীই আবার মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। এতে সভাপতি হিসেবে আমার কিছু করার থাকে না।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি তাদের মতামত নেয়ার জন্য।
তবে নরসিংদী জেলা বিএনপি নেতা হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমাদের কিছু নেতা টাকার ব্যবসা শুরু করছে। সেনা ক্যাম্পে জানান এসব কদাচার পিটিয়ে দূর করুক।