• নরসিংদী
  • মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

নরসিংদী  মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ;   ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
website logo

ঘোড়াশাল সারকারখানার নির্মাণ কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন


জাগো নরসিংদী 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৩৯ পিএম
ঘোড়াশাল সারকারখানার নির্মাণ কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন
নির্মাণাধীন সারকারখানা

নাসিম আজাদ : ৮০ ভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলো এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানার। 

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান, বিসিআইসির প্রকৌশলী ও ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক।

তিনি জানান, দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন বাড়াতে নরসিংদীর পলাশে নির্মিত হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ সার কারখানা। এটি বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্পের একটি। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রজেক্টে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। আর বছরে উৎপাদন হবে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন।

প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে। শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। কারখানাটি উৎপাদনে এলে এখান থেকে পাওয়া যাবে বছরে ৯ লক্ষ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার। আমদানি নির্ভরতা কমে ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসবে।

বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আধুনিক আর পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে কারখানাটি। যাতে খরচ হবে সারে ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ১৮০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা আসবে নির্মাতা দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে। কারখানাটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানের মিটসুভিসি হেবি ইন্ডাস্ট্রিজ ও চায়না প্রতিষ্ঠান সিসি সেভেন।

এটি নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশে যতো সার কারখানা আছে তাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড অর্থাৎ যে গ্যাসটা পরিবেশকে দুষিত করে, সেই গ্যাস আকাশে ছেড়ে দেওশা হয়। শুধু সার কারখানা নয়, দেশের সবগুলো পাওয়ার প্লান্টেও এই দূষিত গ্যাসগুলো আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এটিই বাংলাদেশের প্রথম সার কারখানা হবে, যেখানে দূষিত গ্যাসগুলো আকাশে ছেড়ে না দিয়ে ধরে প্রজেক্ট প্রসেজের মধ্যে এনে অতিরিক্ত ১০ ভাগ ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হবে।

এ গুলো সব সম্মিলিত ভাবে লেটেস্ট টেকনোলজি ব্যাবহার করার প্রেক্ষিতেই প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার তৈরি করা হবে। আগে যেখানে (ফিল)ইউরিয়া অর্থাৎ ছোট ছোট দানা ব্যাবহার করা হতো এখন বড়ো বড়ো দানা ব্যাবহার করা হবে। কারণ বড়ো দানার ইউরিয়া সার পরিবেশ বান্ধব।

ছোটগুলো এখন আর পৃথিবীতে নেই। কারণ এটা পরিবেশকে দূষিত করে। আর গাছ কিন্তু একসঙ্গে নাইট্রোজেন নিতে পারে না। দানাদার ইউরিয়া সারের সুবিধা হলো জমিতে আস্তে আস্তে নাইট্রোজেন পায় আস্তে আস্তে গ্রহণ করে। তিন বেলার খাবার যেমন একসাথে দিলে খাওয়া যায় না, ভাগ ভাগ করে খেতে হয়। অর্থাৎ তিন বেলাই ক্ষুধা লাগবে তিন বলাই খাবো এইভাবে। প্লান্টের খাবার হলো নাইট্রোজেন, যেটাকে স্লো রিলিজ ফার্টিলাইজার বলা হয়। তাতে সে আস্তে আস্তে খেতে পারে। তার পুষ্টিটাও পরিপূর্ণ হয়। আগে যে (প্রিল) ইউরিয়া ছিল সেখানে নাইট্রোজেন গুলো একসাথে রিলিজ হতো।

তাতে যেটুকু প্রয়োজন হতো আর বাকিটুকু আকাশের দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুষিত করে ফেলতো পরিবেশকে। এই সার কারখানাটির ন্যায় এখন থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি সার কারখানা পরিবেশ বান্ধব হয়ে গড়ে উঠবে।

দেশি এবং বিদেশি শ্রমিক সব মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। বর্তমানে সরকারকে ইউরিয়া সার আমদানিতে প্রতি বছর ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, এটি উৎপাদনে আসলে আর তা দিতে হবে না।

বাংলাদেশে বছরে ২৫ লক্ষ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হলেও এটি উৎপাদনে আসলে ২০ লক্ষ টন পাওয়া যাবে। আর বাকি ৫ লক্ষ টন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। অর্থাৎ ৫ ভাগের ৪ ভাগ বাংলাদেশে উৎপাদন হবে। মোট কথা ৮০ ভাগ দেশে উৎপাদন আর ২০ ভাগ বিদেশ থেকে আনতে হবে। এটি উৎপাদনে আসলে দেশের ৫ ভাগের ৪ ভাগ কৃষকের চাহিদা পূরণ হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৯৬৮ জন স্থায়ীসহ প্রায়৩০ হাজার মানুষের।

এই মেগা প্রকল্পের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ ইউরিয়া সার আমদানি হয়। সে ক্ষেত্রে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন সার কম আমদানি করতে হবে। যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। স্থানীয় ভাবে বেকারত্ব অনেকটাই কমে আসবে। যারা ব্যবসায়ী আছেন নতুন করে ব্যবসার সুযোগ পাবে।

দীর্ঘদিন দুটি কারখানা বন্ধ থাকার কারণে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষকরা খুব সহজেই সার পাবে। সবচেয়ে বেশি আমাদের এলাকার মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে। পরিবহনসহ বিভিন্ন ব্যবসার সুযোগ হবে। পলাশ উপজেলা আরও অনেক উন্নত হবে।

তিনি মতবিনিময় সভায় আরও জানান, নির্মাণ কাজে এখনো পর্যন্ত বড়ো ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। শতভাগ সেফটি মেন্টেন করে কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ আগামী ২০২৩ সালের নভেম্বরে শেষ হয়ে ডিসেম্বর উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করছি।

অর্থনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ