স্টাফ রিপোর্টার : নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য সহকারীরা চলমান আন্দোলনের ৬ ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর মহাখালিস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেব সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ।
দীর্ঘদিনের না পাওয়ার বঞ্চনায় এ কর্মসূচিতে প্রতিদিন বিক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য সহাকারীরা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির বিরুদ্ধে শ্লোগান ও জিও জিও শ্লোগানের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল।
অপরদিকে সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থাতার কারণে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নিরব ছিলেন এবং তার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করেন।
এদিকে স্বাস্থ্য সহাকরীদের কর্মসূচির ফলে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের টিকাদান সেবা। এতে টিকা প্রাপ্তি মা ও শিশুরা সময় মতো টিকা কেন্দ্রে এসে, স্বাস্থ্য সহকারীকে না পেয়ে নানান ভোগান্তি হয়ে ফিরছেন। এর সাথে শীতের মধ্যে কোমল মতি শিশুদের সময় মতো টিকা দিতে না পেরে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন। এ ভোগান্তি কবে নাগাত অবসান হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
তবে কর্মসূচি পালনকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা বলছেন, তারা প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠিকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত করে এ কর্মবিরতিতে যেতে চাননি,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা তাদের এ অবস্থান কর্মবিরতি দিতে বাধ্য করিয়েছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি তাদের প্রস্তাবিত, প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস দেয়া কথা রেখে দাবি বাস্তরায়নের জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ করেন, তাহলে দ্রুত তারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।
সংগঠনের নেতারা জানান,আজ যে দাবি জন্য আমরা এ অধিদপ্তরে কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে এটাত আমাদের দাবি নয়। এটা কর্মকর্তাদের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি। এ ওয়াদা বাস্তয়ান না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়ছেন না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে,সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা এ পর্যন্ত পাঁচবার আমাদের দাবি যৌক্তিক বলে প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসই এভাবে দীর্ঘ ২৭ বছর পাড় করছেন। এ দেশে আমাদের মতো এমন বৈষম্য শিকার অন্য কোন বিভাগ আছে বলে আমাদের জানা নেই।
তারা বলছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র ৯ মাস যুদ্ধ করে, এ স্বাধীন দেশে একই দাবির জন্য আমাদের ২৭ বছর সময় ধরে যুদ্ধ করছি। এবার আর তাদেরকে ছাড় নয়। যতদিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা লাগে করব এর জন্য যদি দেশের মা ও শিশুদের মৃত্যুর ঝুকি বারে তাহলে দায়ি হবেন, একমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্ত ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই।
তবে দাবি আদায়ের বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে তারা বলেন, 'আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না করা পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না।'এখতো শান্তিপূণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি, প্রযোজনে আমরা আরো কঠোর হতে বাধ্য হবো। ছয় দফা দাবির জন্য ডিজি অফিসে ৬টি তালা ঝুলাব।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠির নারী ও শিশুদের টিকা দেওয়ার পূর্বে নির্ধারিত দিনের আগে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বাধ্যতামূলক রেজিষ্ট্রেশন করে সেবা প্রদান করেন তারা। এছাড়াও জন্ম-মৃত্যু রেজিষ্ট্রেশন, নবজাতক শিশু রেজিষ্ট্রেশন,গর্ভবতী রেজিষ্ট্রেশন, যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণ, কফ পরীক্ষার জন্য রোগী প্রেরণ, ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ খাওয়ানো এবং উঠান বৈঠক,মা সমাবেশের মাধ্যমে নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকেন।
তাছাড়া ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি নিয়োগের পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারীরা কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা প্রদানসহ বর্তমানেও সপ্তাহে ৩দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
তারা বছরের দুই বার জাতীয় ভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যেমে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদেরকে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খাওয়ানো,প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ করেন।
২০১৩ সালে ২৫ জানুয়ারী ৯ মাস থেকে ১৫ বছর কম বয়সের ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফল ভাবে প্রদান করে। এ জন্য তাদের মাসিক ভ্রমণ ভাতা বাবদ মাসে দেয়া হয় মাত্র ৬০০ টাকা। বেতন পান সর্বসাকল্যে ৯ হাজার ৭০০ টাকা।
তারা আরও বলেন, তারা এমনই অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার যে, টিকা প্রদানের পূর্বে সারা মাস সরকারী ছুটি ব্যতিত রৌদে-বৃষ্টিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে মা ও শিশু রেজিস্টেশন করে টিকা প্রদান করলেও এই জন্য বছরে একটি ছাতাও বরাদ্দ করা হয় না সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ঢাকা মহাখালি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের ৬৪ জেলা থেকে হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা নিয়ে অংশ নেই।
এ সময় অংশ গ্রহণকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন শ্লোগান লেখা ফেষ্টুন এতে লেখা ছিল, গ্রেড বৈষম্যের ঠাই নাই নিয়োগবিধি সংশোধন চাই, ভ্যাকসি হিরো পুরষ্কার স্বাস্থ্য সহকারীর অবদান, পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সহকারীর ঘামের ফসল, স্বাস্থ্য সহকারীদের অবদান দেশেব্যাপী টিকাদান ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে দিয়ে দাও।
‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে এই অবস্থান কর্মবিরতি শুরু করেন। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর সংগঠনটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল, ২৮ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে তারা এ কর্মবিরতিতে যাবেন।
তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতাসংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতন স্কেল পুর্ননিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা ও ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
এর আগেও গত অক্টোবরে একই দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেন।