
হলধর দাস : নরসিংদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে "প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং" ও "ইলেকট্রিক্যাল ইনস্ট্রলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স" পদে অতিথি প্রশিক্ষক পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় (লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক) ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
রায়পুরা উপজেলা সদরে স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানে Skills for Industry Competitiveness and Innovation program (SICIP) প্রকল্পের অধীনে গত ৫ মে-২০২৫ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং ৩টি পদে ৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে যে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার নিয়ম ভঙ্গ করে যোগ্য ব্যক্তি থাকা স্বত্বেও অযোগ্য ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রার্থী বাছাইয়ে বাদ দেয়া হয় একাধিক যোগ্য প্রার্থীকে।
নিয়োগ কমিটি নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে অভিযোগকারীরা বলেন, এটা আই ওয়াস মাত্র।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর সোহরাব উদ্দিন ভূঞার লিখিত অভিযোগে প্রকাশ:
১।স্থানীয় দৈনিক "দৈনিক সময়ের মুক্তচিন্তা" পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদের সংখ্যা উল্লেখ নেই এবং কোন শর্তাবলীরও উল্লেখ করা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে ৪টি পদে লোক নেওযার কথা বলা আছে কিন্তু রেজাল্ট শীটে ৬টি ক্যাটাগরির কথা উল্লেখ করা হয়। আবার রেজাল্ট শীটে স্মারক দেওয়া আছে। লোকাল পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি দেওয়াতে ৪নং (জবপ্লেসমেন্ট কর্মকর্তা) পদে প্রার্থী পাওয়া যায় নাই।
বিজ্ঞপ্তির ২নং পদের (প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং) এর ৬টি আবেদন জমা পরে। ৩টি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার থাকার স্বত্বেও লিখিত পরীক্ষার জন্য ১ জন ডিপ্লোমা ও ১ জন অধ্যক্ষের পছন্দের এসএসসি প্রার্থীকে পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। তার সাথে রফা করেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ৬ জন প্রার্থীর যোগ্যতা থাকা সত্বেও ৪ জনকে বাদ দুই জনের লোক দেখানো পরীক্ষা নেয়া হয়।
নিরপেক্ষ এক্সপার্ট দিয়ে প্রশ্নপত্র এবং খাতা দেখা ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ(নিয়োগ কমিটির সভাপতি) তার পছন্দের আস্থাভাজন (প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং) অনভিজ্ঞ ফাহমিদা জাহানকে দিয়ে পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
নিয়োগ প্রাপ্ত রাজা সরকারের অভিজ্ঞতার সনদ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা হয়।
অভিযোগকারী বলেন, ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় তাকে পুরাতন নষ্ট মালামাল দেওয়া হয়। তাছাড়া, মালামাল সময় মত সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয়নি। যা দেওয়া হয়েছিলো তা ঢাকনাবিহীন নষ্ট হাইকমট, ফ্লাসিং, সিষ্টার্ন এর ভিতরে কোন মালামাল ছিল না। মালামাল না থাকার কারণে প্র্যাক্টিক্যালে সমস্যা হয়। তবুও আমি সময় মত কাজ সম্পন্ন করি। অপরদিকে, পছন্দের প্রার্থী রাজা সরকারকে সকল মালামাল নতুন ও সময় মত দেওয়া হয়। অধ্যক্ষের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর আবু সাঈদ পছন্দের প্রার্থী রাজা সরকারকে পরীক্ষার সকল কাজে সহযোগিতা করেন।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি দীর্ঘদিন চিফ ইন্সস্ট্রাক্টর পদে থাকার পর প্রিন্সিপাল পদে পদায়ন হওয়ার পরও নরসিংদী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে তার চেয়ার পুনরায় বহাল থাকে। দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও একক স্বেচ্ছাচারিতায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সংক্রান্ত মালামালের ভুয়া ভাউচার, বিভিন্ন প্রকল্পের এবং নরসিংদী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর সকল প্রকার কাচামালের টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগে আরও বলা হয় যে, নরসিংদী শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলখানা মোড়ের পাশে চিনিশপুর মৌজায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন অধ্যক্ষ। এছাড়া, নরসিংদীর বিভিন্ন জায়গায় নামে বে-নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন যা আয় বহির্ভূত।
SEIP এবং Asset প্রজেক্ট এর বিধান মতে ছাত্র-ছাত্রীদের একাউন্টে চেক দেওয়ার কথা থাকলেও সে বিধি-বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নামে/বেনামে নিজ লোকদের কে বাই নামে চেক লিখে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
অপর অভিযোগকারী কাকন মিত্র লিখিত অভিযোগে বলেন, অতিথি প্রশিক্ষক (ইলেকট্রিক্যাল ইনস্ট্রলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স) এ যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে; নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যেভাবে থাকার কথা বাস্তবে তার মিল নেই এবং প্রার্থীর আবেদন পত্র বাতিল হওয়ার কথা।
নিয়োগে সুপারিশ প্রাপ্ত সাইফুল রহমান ২০২০ সালে ডিপ্লোমা পাস করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তার ৭ বছর অভিজ্ঞতা হয় নাই। তাছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত মাষ্টারস ক্রাফটম্যান/ফোরম্যান অভিজ্ঞতার কথা বলা আছে যদিও সেই সনদ দেওয়া থাকে সেটি জাল জালিয়ারিত মাধ্যমে তৈরী করা। সুষ্ঠু তদন্তেই তা ধরা পড়বে।
অভিযোগকারীদের দাবী উক্ত নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ দিলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মা শান্তি পাবে।
এব্যাপারে জানতে নিয়োগ কমিটির সভাপতি নরসিংদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাসিনা ইয়াসমিনকে গত ৭ মে তারিখে তাঁর মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি । তাঁর ছেলে পরিচয়ে জনৈক শুভ ফোন রিসিভ করে বলেন, তিনি অসুস্থ। কথা বলতে পারবেন না। অথচ, এক মিনিট আগে তিনি ফোন দিয়ে ইউএনও এর নাম্বার নিতে বলেন। পরদিন ৮ মে বিকেলে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি ।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সিভিল ইন্সট্রাক্টর ফাহমিদা জাহান বলেন, এখানে আমরা কিছুই না। ইউএনও স্যার নিয়োগ কমিটিতে আছেন। ইউএনও স্যারের দিকনির্দেশনাতেই সবকিছু হইছে। নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। যাকে নিয়োগ দেয়ার কথা, তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বাংলা বিষয়ের ইন্সট্রাকটর মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমাদের নিয়োগ কমিটির সভাপতি ছিলেন ইউএনও। ওনার সভাপতিত্বেই সবকিছু হইছে। তাঁকে এ প্রতিনিধি বলেন, কাগজে পত্রে দেখলাম সভাপতি অধ্যক্ষ হাসিনা ইয়াসমি। আর আপনি বললেন ইউএনও সভাপতি । উত্তরে তিনি বলেন,কাগজে একটা দেখলেই আপনি ওইটা বিশ্বাস করবেন? যারা অভিযোগ করছে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে। নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে ।
উল্লেখ্য, কলেজের অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি হাসিনা ইয়াসমিন গত ১৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। চিফ ইন্সট্রাকটর থেকে গত ৩০ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি লাভ করেন । ফ্যাসিস্ট এর এই প্রতিনিধি পদোন্নতি লাভ করেও এখানে থেকে বিভিন্ন অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে জানান অভিযোগকারীরা।