মকবুল হোসেন: নরসিংদীর মাধবদীতে শাহানাজ ডাইং এর তালা ভেঙ্গে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৩ টায় নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ডাইং মালিক আবু ছালেক মিয়া বাদী হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখ করা সহ আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, মাধবদীর বলভদ্রদী গ্রামের মৃত হাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিমের ছেলে মোঃ মামুন মিয়া (৩০) ও মোঃ মাসুম মিয়া (৩৬) সহ আরো অজ্ঞাত ২/৩ জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী মোঃ আবু ছালেক মিয়া গত ১৭-০৮-২৩ ইং তারিখে তার স্ত্রী মোসাঃ ওম্মে হাবিবা বিথীর অপারেশন জনিত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ৬ দিন ভর্তি থাকার সুযোগে তার সহোদর দুই ভাই আরো অজ্ঞাত ২/৩ জনকে নিয়ে বন্ধ কারখানার গেইটের তালা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি রয়েল ড্রেলিম ৩ টনি কোরিয়ান ব্রয়লার, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২৫ ঘোড়া সাব মার্সিবল পাম্প, ১৫ লাখ টাকা মূল্যের গ্যাস ও পানি সংযোগ পাইপ লাইনসহ মোট ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসে এ বিষয়ে জানতে পেরে বিবাদীদের কাছে মালামাল ফেরত চাইলে তারা মালামাল ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় । এছাড়াও গত ১১-০৩-২০২৩ ইং তারিখে বাদী ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব অবস্থান কালীন সময়ে ১৫-০৩-২৩ ইং তারিখ রাত ১ টার দিকে বিবাদীগণ কারখানার নিরাপত্তা কর্মীকে কৌশলে সরিয়ে দিয়ে কারখানা থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ইন্ডিয়ান মার্চেন্ডাইজ মেশিন ও ৫০ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যায়। দেশে এসে এগুলো নিয়ে অনেক দেন দরবার হলে ও তারা তা ফেরত দেয়নি বিধায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
কারখানা মালিক আবু ছালেক মিয়া বলেন,বিগত ২০১৪ সালে আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক মাধবদী শাখায় দায়বদ্ধ রেখে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একক মালিকানায় শাহানাজ প্রিন্ট শাড়ি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাহানাজ ডাইং এর ব্যাবসা পরিচালনা শুরু করে সুনামের সাথে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছি।
বিগত করোনা মহামারীর পর থেকে ব্যাবসায়ীক মন্দার কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে আমার সহোদর দুই ভাই বিভিন্ন মানুষের প্ররোচনায় পরে দুই দফায় আমার কারখানার সাড়ে তিন কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গত ১৮-০৮-২৩ ইং তারিখে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে থাকায় তারা পুনরায় আমার কারখানার তালা ভেঙ্গে প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
আমার ছোট ভাই মাসুদ রানা (৩৩) এতে বাধা দিলে তারা তাকে কুপিয়ে জখম করা সহ তার শিশু সন্তানকে মারধর করে এবং তার মোটরসাইকেল ভেঙ্গে ফেলে। বাধ্য হয়ে ২৩-০৮-২৩ ইং তারিখে সে মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। এতে করে মামুন মিয়া (৩০) ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৪-০৮-২৩ ইং তারিখে মাসুদ রানাকে পুনরায় মারধর করে।
তাছাড়া আমি আমার কারখানার মালামাল চুরির বিষয়ে থানায় একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। বর্তমানে বিবাদীগণ আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমি আমার পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে বিবাদীদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত ১ নং বিবাদী মামুনের কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মামলার ২ নং বিবাদী মাসুম মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার বড়ভাই ছালেক মিয়া ওমরা হজ্বে যাওয়ার কিছুদিন পর আমার ছোটভাই মামুন আমাকে খরচ করার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেয়। আমি তার কাছ থেকে টাকার উৎস জানতে চাইলে সে তার কাছে টাকা না থাকার কারণে কাউকে না জানিয়ে ডাইং কারখানার ইন্ডিয়ান মার্চেন্ডাইজ মেশিনটি বিক্রি করে দিয়েছে বলে আমাকে জানায়।
আমি তাৎক্ষণিকভাবে বড় ভাবিকে বিষয়টি জানালে ভাবি ভাইকে বিষয়টি অবগত করে।
তাছাড়া গত আগস্ট মাসে মামুন, আলামিন ও মাসুম তারা তিনভাই মিলে তাদের বড়ভাই ছালেক মিয়া হাসপাতালে থাকার সুবাদে কারখানার ব্রয়লার বিক্রি করে দেয় বলে ও জানান তিনি।
মাধবদী থানার নব যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কামরুজ্জামান মিলনের কাছে জানতে চাইলে এবিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।