
এক বছরের পথচলা। হয়তো শোনায় ছোট্ট সময়, কিন্তু আমাদের জন্য এই এক বছর মানে এক অগ্নিপরীক্ষা, এক সংগ্রামের ইতিহাস।
২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মানুষ একসাথে বসেছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, মুক্তচিন্তকদের জন্য চাই একটি সত্যিকারের কার্যকর সংগঠন; যেখানে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না, থাকবে না কোনো আপসের জায়গা। সেই দিনই জন্ম নেয় আজকের মুক্তচিন্তা পরিষদ বাংলাদেশ।
অনেকেই জানেন, আমি দীর্ঘ আট বছর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাথে পথ চলেছি, প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের সময়ে সত্যের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমাকে কঠিন মূল্য দিতে হয়। আমি বলেছিলাম, প্রতিবন্ধী ও, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সীমিত কোটা থাকুক, কিন্তু অন্য সব কোটা বাতিল হওয়া উচিত। আর যখন ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি চালানো হলো, আমি প্রতিবাদ করেছিলাম।
কিন্তু সেসময় সমিতির অধিকাংশ সদস্যের অবস্থান ছিল, 'বাংলাদেশে প্রগতিশীল আন্দোলন করতে হলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না।' আমি তখনই বলেছিলাম, 'আমরা মুক্তচিন্তক, মুক্তচিন্তকদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকা উচিত।'
কিন্তু আমার কণ্ঠকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হলো। আমাকে গালি দেওয়া হলো ‘জামাত-রাজাকার’ বলে। সেই আঘাত আমাকে সমিতি ছাড়তে বাধ্য করেছিল।
ভেবেছিলাম, আর কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত হবো না। কিন্তু ইতিহাসের মতো মানুষও পথ দেখায়। বিশেষ করে মোতালেব দেওয়ান ভাইয়ের আন্তরিক আহ্বানে আমরা আবার নতুন করে দাঁড়ালাম। তাঁর প্রস্তাবেই সর্বসম্মতিক্রমে নাম রাখা হলো, 'মুক্তচিন্তা পরিষদ'।
এই এক বছরে আমরা দেখেছি ঝড়, সংশয় আর চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য, দেশ-বিদেশের মুক্তচিন্তক বন্ধুদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা। তাদের হাত ধরে, তাদের সাহসে, আমরা আজো দাঁড়িয়ে আছি।
এই এক বছরে অসংখ্য বন্ধু পাশে থেকেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। মুক্তচিন্তা পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা তাঁদের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
আজ আমাদের প্রথম জন্মদিন।
এই জন্মদিন শুধু আনন্দ নয় এটা আমাদের এক বছরের সংগ্রামের ইতিহাস, নতুন স্বপ্নের প্রতিজ্ঞা।
শুভ জন্মদিন, মুক্তচিন্তা পরিষদ বাংলাদেশ।
সবাইকে প্রথম বর্ষপূর্তির সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
ফারুক হোসেন সাদী
সদস্য সচিব
মুক্তচিন্তা পরিষদ বাংলাদেশ